৫১ হাসপাতালে বৈকালিক চিকিৎসা চালু
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ৩১ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দেশের সরকারি হাসপাতালে রোগীদের বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম চালু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। কার্যক্রমের আওতায় সরকারি হাসাপাতালের চিকিৎসকরা নির্ধারিত ডিউটি শেষে ওই হাসপাতালের নিজ চেম্বারে বসে ব্যক্তিগতভাবে রোগী দেখতে পারবেন। বিনিময়ে পাবেন নির্ধারিত ফি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘পাইলট প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা ১২টি জেলা সদর ও ৩৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বৈকালিক চিকিৎসাসেবা শুরু করতে যাচ্ছি। এর মাধ্যমে রোগীরা বিকাল ৩টার পরে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চিকিৎসাসেবা পাবেন। ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কার্যক্রম চলবে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও কনসালটেন্ট হাসপাতালে বসে রোগী দেখবেন। রোগীর কোনো ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হলে সেগুলোও করা হবে।’
উদ্বোধনকালে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব আজিজুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার খুরশিদ আলম, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. টিটো মিয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে এদিন বৈকালিক চেম্বারের সেবাদানে নির্দেশনাপ্রাপ্ত দেশের প্রায় সব হাসপাতালেই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে প্রথম দিন এই কর্মসূচি সম্পর্কে প্রচার কম থাকায় কিছু হাসপাতালে রোগী উপস্থতি কম ছিল। অনেক জায়গায় পূর্ণ প্রস্তুতির ঘাটতিও দেখা গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দু-একদিনের মধ্যে তারা পরিপূর্ণ সেবা চালু করতে পারবেন।
যুগান্তরের আগৈলঝাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ভার্চুয়ালি আগৈলঝাড়া সরকারি হাসপাতালে বৈকালিক চিকিৎসাসেবা উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এ সময় আগৈলঝাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপস্থিত উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রইচ সেরনিয়াবাত এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বখতিয়ার আল মামুনের বক্তব্য শোনেন মন্ত্রী।
আগৈলঝাড়া প্রান্তে আরও উপস্থিত ছিলেন বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হুমায়ন শাহিন খান, সিভিল সার্জন ডা. মারিয়া হাসান প্রমুখ। এছাড়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া, মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মকর্তারা।
মনিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি জানান, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাতীয়ভাবে কর্মসূচিটি উদ্বোধনের পরই খুলনা বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. মঞ্জুরুল মুর্শিদ যশোরের মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বৈকালিক চেম্বারের উদ্বোধন করেন। এর পরই সোনিয়া আফরিন ও আনিছুর রহমান দম্পতি ২২ মাসের মেয়ে আরশীকে নিয়ে হাসপাতালে আসেন।
এ সময় চেম্বারে ছিলেন মা ও শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. জেসমিন সুমাইয়া। মাত্র তিনশ টাকায় এই দম্পতি পরামর্শ নেন। তারা জানান, জেলা শহরের কোনো ক্লিনিক কিংবা ডায়াগনসিস সেন্টারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে গেলে কমপক্ষে ৫০০ টাকা পরামর্শ ফি গুনতে হয়। যাতায়াত ভাড়া ও সময় লাগে। এ ধরনের উদ্যোগে তাদের মতো সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে।
মাধবপুর (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, বিকাল ৩টার দিকে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকদের চেম্বারের প্রস্তুতি দেখা যায়। তবে উদ্বোধনী দিনে চেম্বারগুলো ছিল ফাঁকা। বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত তিনজন রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. রাজীব চক্রবর্তী, ডা. তারেকুজ্জামান ও ডা. রকিবুল ইসলাম রোগী দেখেন।
মানিকগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ সময় জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোজাজ্জেম হোসেন মিয়া, পৗর মেয়র মো. রমজান আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মোমিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। প্রচার না থাকায় উদ্বোধনী দিনে মাত্র সাতজন রোগী সেবা নিতে এসেছিলেন।
ফেনী প্রতিনিধি জানান, ফেনী জেনারেল হাসপাতাল ও ছাগলনাইয়া উপজেলা হাসপাতালে বৈকালিক চিকিৎসাসেবা চালু হয়েছে। তবে রোগী উপস্থিতি ছিল একেবারে কম। হাসপাতালের এক কর্মচারীর মতে, এ বিষয়টি সাধারণ মানুষ জানত না তাই রোগী আসেনি।
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি জানান, কোনোরকম প্রচার-প্রচারণা ছাড়াই ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে মাত্র দুই সিনিয়র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে শুরু হয়েছে ইনস্টিটিউশনাল প্রাইভেট প্র্যাকটিস। কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন, সিভিল সার্জন ডা. নূর নেওয়াজ আহমেদ, পৌর মেয়র আঞ্জুমান আরা বেগম বন্যা, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মো. সামসুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
শেরপুর প্রতিনিধি জানান, শেরপুরের নকলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বৈকালিক চিকিৎসার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে প্রচার না থাকায় প্রথম দিনে সেবা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা ছিল একেবারেই কম। হাসপাতালে আয়োজিত উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সিভিল সার্জন ডা. অনুপম ভট্টাচার্য ও ডা. গোলাম মোস্তফা উপস্থিত ছিলেন।
মধুপুর ( টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি জানান, উদ্বোধনের পর মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বৈকালিক চিকিৎসাসেবা চালু হয়েছে। এ সময় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছরোয়ার আলম খান আবু, নির্বাহী কর্মকর্তা শামীমা ইয়াসমিন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাইদুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।