সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণ
বেজমেন্টের পানি পরীক্ষা হচ্ছে সায়েন্সল্যাবে

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় অনেক প্রশ্নের উত্তর এখনো অজানা। বিস্ফোরণের কারণ হিসাবে বিভিন্ন সংস্থা সম্ভাব্য বেশকিছু বিষয়ের কথা জানিয়েছে। তবে এর উৎপত্তিস্থলে ঠিক কোন ধরনের গ্যাসের উপস্থিতি ছিল-সে বিষয়ে এখনো সম্মিলিত সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থাগুলো।
তবে প্রতিটি সংস্থাই জানিয়েছে, তারা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। ভবনের বেজমেন্টে জমে থাকা পানি পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) বা সায়েন্সল্যাবে পানি পাঠিয়েছে সিটিটিসি। এর মাধ্যমে জানা যাবে ভবনে মিথেন ছাড়া আর কী ধরনের গ্যাসের উপস্থিতি ছিল।
এদিকে বিস্ফোরণের ঘটনায় চিকিৎসাধীন আজম মৃধা (৩৬) মারা গেছেন। এ নিয়ে এই ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে ২৪ জন হয়েছে। বেলা ১১টার দিকে বিস্ফোরণস্থলে যান সিটিটিসির একটি দল। সেখানে বোম ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। পরে আলামত সংগ্রহের কাজ শুরু করেন তারা। দুপুরের দিকে ১২ থেকে ১৫ জনের একটি দলকে কাজ করতে দেখা গেছে। এর নেতৃত্বে ছিলেন সিটিটিসির উপকমিশনার মিশুক চাকমা।
বিস্ফোরণস্থলে যাওয়া একাধিক সদস্য যুগান্তরকে জানান, ঘটনাটি তদন্ত করতে গিয়ে বেশ কিছু নতুন প্রশ্ন তাদের সামনে এসেছে। এজন্য বিস্ফোরণস্থলে এসেছেন। এর আগে ভবনের বেজমেন্টে জমে থাকা পানি আলামত হিসাবে সংগ্রহ করে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে (বিসিএসআইআর) পাঠানো হয়েছে। যার মাধ্যমে জানা যাবে অন্য কোনো ধরনের গ্যাসের উপাদান সেখানে ছিল কিনা।
সিটিটিসির বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. রহমত উল্লাহ চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, তদন্তে অগ্রগতি রয়েছে। তবে এখনই সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলার সময় আসেনি। তদন্ত চলছে।
এদিকে বিস্ফোরণস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বিস্ফোরণের পঞ্চম দিন শনিবার সকাল থেকেই ভবনটির ধসে পড়া ঠেকাতে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের পিলার রক্ষার কাজ চলছিল। যা শুরু হয় বৃহস্পতিবার রাত থেকে। রাজউক থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কাজটি করছে। এরই মধ্যে ভবনের বাইরের অংশের ক্ষতিগ্রস্ত কলামে ১৩টি স্টিলের পাইপ (মাইল্ড স্টিল বা এমএস পাইপ) দিয়ে অস্থায়ী ঠিকা দেওয়া হয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মো. রিয়াজ বলেন, একেকটি পাইপের আয়তন ৬ ইঞ্চি। আর লম্বায় ২০ ফুট। প্রয়োজন অনুযায়ী কেটে পাইপ বসানো হয়েছে।
আরও একজনের মৃত্যু : শনিবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজম মৃধা (৩৬) নামের এক ব্যক্তি মারা যান। তিনি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন। আজম পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার গোসিংগা গ্রামের চায়ের দোকানি শাজাহান মৃধার ছেলে। থাকতেন রাজধানীর মগবাজারের মধুবাগ এলাকায়। সিদ্দিকবাজারের বেজমেন্টের বাংলাদেশ স্যানিটারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়। লাভা নামের প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া ৬ বছর বয়সি এক মেয়ে আছে তার। স্ত্রীর নাম রিয়া আক্তার।
হাসপাতাল সূত্র বলছে, সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এখনো ২১ জন চিকিৎসাধীন। বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক এসএম আইয়ুব হোসেন জানান, আজম মৃধার শরীরের ৮০ ভাগ পুড়ে গিয়েছিল। এ পর্যন্ত বিস্ফোরণে আহত ১২ জন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে তিনজন মারা গেলেন।