রমজানেও ঘরে-বাইরে ব্যস্ত থাকবে বিএনপি
ইফতার রাজনীতির পাশাপাশি জনসম্পৃক্ত ইস্যুতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধনের ভাবনা
হাবিবুর রহমান খান
প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সরকারবিরোধী আন্দোলনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। ধারাবাহিক কর্মসূচির পাশাপাশি বাড়ানো হচ্ছে সাংগঠনিক সক্ষমতাও। চলমান আন্দোলনে থাকবে না কোনো বিরতি। তাই আসছে রমজানেও পুরোদমে চলবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। ঘরে-বাইরে নানা কর্মসূচি নিয়ে সক্রিয় থাকবে দলটি।
ইফতার রাজনীতিকে এবার অনেকটা গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত করা হবে। আন্দোলনে সমর্থন আদায়ে বিভিন্ন পেশাজীবীর পাশাপাশি প্রভাবশালী দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গেও সম্পর্ক জোরদার করতে চায় দলটি।
এদিকে রমজানে ঘরোয়া রাজনীতির পাশাপাশি জনসম্পৃক্ত ইস্যু নিয়ে মাঠে সক্রিয় থাকবে দলটি। দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুতের দফায় দফায় মূল্যবৃদ্ধিসহ জনদুর্ভোগকে গুরুত্ব দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনের মতো কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে। মাঠের কর্মসূচির পাশাপাশি আন্দোলন বেগবান করার কৌশল নিয়ে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গেও রুদ্ধদ্বার বৈঠক করতে চায় বিএনপির হাইকমান্ড।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু যুগান্তরকে বলেন, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন চলছে। আন্দোলনে ইতোমধ্যে দেশের মানুষ সম্পৃক্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা জনগণের অধিকার আদায়ে আন্দোলন করছি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকা দুরূহ হয়ে উঠেছে। আসছে রোজায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই জনগণের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের দাবি নিয়ে আমরা মাঠে আছি, ছিলাম, থাকব। রমজানেও জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি নিয়ে ভাবা হচ্ছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুজন সদস্য যুগান্তরকে বলেন, করোনার কারণে বিগত দুই বছরে বড় পরিসরে ইফতারের আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। নির্বাচন ও আন্দোলনের বছর হওয়ায় ঘরোয়া রাজনীতির অংশ হিসাবে এবার ইফতারকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বিএনপির পক্ষ থেকে কমপক্ষে চারটি ইফতারের আয়োজন করা হবে। প্রথম রমজানে এতিম ও আলেম-ওলামাদের সৌজন্যে হবে ইফতার। এরপর পেশাজীবী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা এবং কূটনীতিকদের সম্মানে ইফতার অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকবে। এসব ইফতারে আমন্ত্রিতদের সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিশ্চিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ঢাকা মহানগর বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলসহ প্রায় সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকেও ইফতারের আয়োজন করা হবে। নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ ও সক্রিয় রাখতে কেন্দ্রের পাশাপাশি দেশের সব বিভাগ ও জেলা এমনকি উপজেলা পর্যায়েও ইফতার পার্টির আয়োজন করার চিন্তাভাবনা চলছে।
ওই দুই নেতা আরও বলেন, রমজানে গরিব ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। ছোলা, মুড়িসহ ইফতারসামগ্রীর পাশাপাশি ঈদের দিনের জন্য চিনি, সেমাইসহ শাড়ি বা লুঙ্গি দেওয়া হতে পারে। একই সঙ্গে কারাগারে আটক এবং আন্দোলনে আহত ও নিহত নেতাকর্মীদের পরিবারের পাশে দাঁড়াবে দল। তাদের তালিকাও তৈরি করা হচ্ছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সৌজন্যে প্রত্যেকের বাসায় পাঠানো হবে ঈদ উপহার। দেওয়া হবে আর্থিক সহায়তাও।
সূত্র জানায়, রমজানে কেন্দ্রীয় নেতাদের যার যার এলাকায় গিয়ে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের এ ব্যাপারে দেওয়া হয়েছে বিশেষ নির্দেশনা। গরিব ও ছিন্নমূল মানুষকে সহায়তার পাশাপাশি সরকারবিরোধী আন্দোলনে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করতে বলা হয়েছে।
রমজানে ঘরোয়া রাজনীতির পাশাপাশি সংগঠন গোছানোর দিকে বিশেষ নজর দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো পুনর্গঠনসহ নিরসন করা হবে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আগামী দিনের আন্দোলনে সবাই যাতে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নামে, সেই পরিকল্পনা সামনে রেখে কোন্দল নিরসনেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক যুগান্তরকে বলেন, রমজানে ইফতারসহ নানা কর্মসূচি থাকবে। রমজানকে সাংগঠনিক মাস হিসাবে নিয়ে প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হবে।