Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

নির্মাণ তদারকিতে সীমাহীন অনিয়ম

সর্বোচ্চ বিস্ফোরণঝুঁকিতে ছিল বিধ্বস্ত ভবনটি

Icon

মাহমুদুল হাসান নয়ন

প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সর্বোচ্চ বিস্ফোরণঝুঁকিতে ছিল বিধ্বস্ত ভবনটি

সর্বোচ্চ বিস্ফোরণঝুঁকিতে ছিল সিদ্দিকবাজারে বিধ্বস্ত ভবনটি। ছবি: সংগৃহীত

সিদ্দিকবাজারের বিস্ফোরণ হওয়া ভবনটি অনেক আগে থেকেই সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। জমে থাকা গ্যাস থেকে বড় ধরনের বিস্ফোরণ বা অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার জন্য সবকিছুই বিদ্যমান ছিল সেখানে। শুরুতে বেজমেন্টে পার্কিংয়ের স্থানটিকে বানানো হয় রান্নাঘর। পরবর্তীকালে সেখানে গ্লাসে ঘেরা বদ্ধ স্যানিটারি দোকান তৈরি করা হয়। তবু পুরোনো গ্যাসের লাইনগুলো ঠিকই রয়ে গিয়েছিল। বেজমেন্টে বাতাস চলাচলের জন্য কোনো ভ্যান্টিলেশনের ব্যবস্থা ছিল না। ভবনের বাসিন্দাদের পয়োবর্জ্য জমা হওয়ার সেপটিক ট্যাংকের অবস্থানের বিষয়েও সুনির্দিষ্টভাবে জানতেন না ভবন মালিকরা। ফলে স্থানটি দীর্ঘদিন পরিষ্কার না করায় বায়োগ্যাস জমা হতে থাকে। তাছাড়া ভবনটির উত্তর পাশে সামান্য ফাঁকা থাকলেও দক্ষিণ পাশে চুল পরিমাণও ফাঁকা ছিল না। তিনতলা থেকে সাততলা করতে যথাযথ প্রক্রিয়ায় নেওয়া হয়নি অনুমোদন। এভাবে পদে পদে অনিয়মে ভবনটি মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছিল।

বিভিন্ন সংস্থা ও তদন্ত দলের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এসব তথ্য। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে ভবন মালিকসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

বৃহস্পতিবার সকালে বিধ্বস্ত সাততলা ভবনটির সামনে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন উদ্ধারকারী, তদারক ও তদন্ত সংস্থা সেখানে উপস্থিত। এর মধ্যে ফায়ার সার্ভিস ভারী যন্ত্র ব্যবহার না করে সনাতন পদ্ধতিতে বেজমেন্টে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছে। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে বিস্ফোরণে নিখোঁজ মেহেদী হাসান স্বপনের মরদেহ বেজমেন্ট থেকে উদ্ধার করেন তারা। এছাড়া শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে মো. ইয়াসিন মিয়া নামের একজনের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে এই ঘটনায় ২৩ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। বিকাল পর্যন্ত কেউ স্বজন নিখোঁজের দাবি না করায় অনানুষ্ঠানিকভাবে তল­াশি বন্ধ রাখেন তারা। এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি দাঁড় করিয়ে রাখতে শুক্রবারের মধ্যে কাজ শুরু করা হবে বলে জানায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, তিন দিনেও ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের কাগজপত্র খুঁজে পায়নি তারা। তবে ঢাকা মহানগর পুলিশের একটি সূত্র যুগান্তরকে জানিয়েছে, ভবনটির নির্মাণ প্রক্রিয়া ১৯৮৩ সালে শুরু হয়। তবে পরবর্তীকালে কীভাবে এটি সাততলা করা হলো-সেই তথ্য এখনো উদঘাটন করা যায়নি। এর অন্যতম কারণ ২০১১ সালে ভবনটির প্রকৃত মালিক হাজী মোহাম্মদ রেজাউর রহমানের মৃত্যু। এ অবস্থায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) জানিয়েছে, এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। তদারক সংস্থাগুলোর দায়িত্বে অবহেলা ও গাফিলতি নিয়েও তদন্ত চলছে।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, বিস্ফোরণের ঘটনায় ভবন মালিক ও দোকান মালিকরা দায় এড়াতে পারেন না। তবে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কোন শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী কোথায় কী অবহেলা করেছেন, কী ধরনের গাফিলতি রয়েছে-এসব বিষয়ে তদন্ত চলমান। তিনি আরও বলেন, পুরান ঢাকায় ৫০ ভাগের বেশি ভবন রয়েছে যেসব ভবনের মালিকদের বৈধ কোনো কাগজ নেই। বিল্ডিং কোড অনুযায়ী যেভাবে ভবন নির্মাণ করা দরকার সেভাবে তারা করেননি। এ বিষয়টি যাদের দেখভাল করা দরকার তাদের সেটি করতে হবে। আমরা তো সহযোগী সংস্থা, আমরা সহযোগিতা করব। আমাদের বললে আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।

ডিএমপির অনুসন্ধান ও পর্যবেক্ষণ : ঢাকা মহানগর পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল সরেজমিন পরিদর্শন ও সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে বিস্ফোরণের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু মতামত ও পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে। সেখানে সাধারণ তথ্য হিসাবে তারা উলে­খ করেছে, ভবনটির নাম কুইন স্যানিটারি মার্কেট। এক সময় এটার নাম ছিল কুইন ক্যাফে। ১০ তলা ভবনের পরিকল্পনা করা হলেও ১৯৯২ সাল পর্যন্ত বেজমেন্ট ও একতলা সম্পূর্ণ করা ছিল। এর বেজমেন্টে ছিল রান্নাঘর আর একতলায় ছিল খাবারের হোটেল। এই রান্নাঘরে বাণিজ্যিক গ্যাসের বড় লাইন ছিল, যা পরে লিখিতভাবে তিতাসের কাছে সারেন্ডার করা হয়। ২০০৪ সালে ভবনটির সাততলা পর্যন্ত সম্পূর্ণ করা হয়। বর্তমানে একটি আন্ডারগ্রাউন্ড বেজমেন্টসহ সাততলা পর্যন্ত ভবনটি করা আছে।

পর্যবেক্ষণ অংশে বলা হয়েছে, ভবনটির বেজমেন্টে পার্কিংয়ের কথা থাকলেও সেখানে এক সময় রান্নাঘর ছিল। বর্তমানে সেখানে ‘বাংলাদেশ স্যানিটারি’ নামের একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে স্যানিটারি মালামাল বিক্রি করা হয়। প্রায় ১৮০০ বর্গফুটের এ আন্ডারগ্রাউন্ডের সম্পূর্ণটাই কাচঘেরা। বড় দুটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রে (এসি) ঠান্ডা করা হয় এই স্যানিটারি দোকান। এ আন্ডারগ্রাউন্ডে আরও আছে একটি বড় পানির ট্যাংক। সাততলা ভবনের কোথায় স্যুয়ারেজ সেপটিক ট্যাংক, তা ভবনের মালিকরা নিশ্চিত নন। ধারণা করা হয়, উত্তর পাশের ভবনের সঙ্গে এ ভবনের যে আড়াই বা তিন ফুট গলি আছে, সেখানেই দুই ভবনের সেপটিক ট্যাংক অবস্থিত। ভবনটি কোনো পরিত্যক্ত পাবলিক স্পেস/ভবন নয়, ব্যক্তিমালিকানাধীন। বিভিন্ন ব্যবসায়ীর সার্বক্ষণিক নজরদারি ও সিসি ক্যামেরার আওতায় ছিল এটি। ফলে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির জন্য যে পরিমাণ বিস্ফোরক প্রয়োজন, তা এখানে সবার অজান্তে জমা রাখা প্রায় অসম্ভব।

সুনির্দিষ্ট আটটি পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, বেজমেন্টে গাড়ি পার্কিং থাকলে বাতাসের ভেন্টিলেশন থাকত। কোনো গ্যাস জমা হতো না। বিস্ফোরণও হয়তো হতো না। সাততলা ভবনের বেজমেন্টসহ তিনটি ফ্লোরে বাণিজ্যিক কারণে আসা লোকজন, বাসাবাড়ির লোকজনের পয়োবর্জ্য যেখানে জমা হয়, দীর্ঘ সময় সেই জায়গা পরিষ্কার না করায় সেখানেও বায়োগ্যাসের জন্ম হতে পারে, যা বিভিন্ন কারণে বিস্ফোরিত হয়ে ব্যাপক ক্ষতির সৃষ্টি করে। এক সময় এই বেজমেন্টের রান্নাঘরে বাণিজ্যিক বড় লাইনে গ্যাস সরবরাহ করা হতো, যা পরে বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু বাড়ির অন্যান্য তলার আবাসিক লাইন এখনো চলমান। ফলে এই লাইন সম্পূর্ণ বন্ধ না হয়ে সেখান দিয়েও তিতাস গ্যাস লিক হতে পারে। কোনোভাবে জমা গ্যাসে স্পার্কের মাধ্যমে বিস্ফোরণ হতে পারে।

এতে আরও বলা হয়, ভবনমালিকদের তথ্যমতে, মূল ক্ষতিগ্রস্ত ভবন এবং তার উত্তর পাশে ব্র্যাক ব্যাংকের ভবনের মাঝখানে সরু একটি গলি আছে। এ গলিতে পয়োবর্জ্য পদার্থের সেপটিক ট্যাংক, এসির আউটার ইত্যাদি অবস্থিত। বিস্ফোরণে সেপটিক ট্যাংকের পাশের দেওয়ালগুলো সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পয়োবর্জ্য পদার্থের বায়োগ্যাসের বিস্ফোরণে এমনটি হতে পারে। এই ভবনটির আন্ডারগ্রাউন্ড বা বেজমেন্টে বড় একটি স্যানিটারি দোকান, নিচতলায় পাঁচটি দোকান এবং কাপড়ের দুটি দোকান ছিল, যেগুলোর জন্য অনেক কাচ এবং ইন্টেরিয়রের কাজ করা হয় এবং শক্তিশালী এসি ব্যবহার করা হয়। এসিগুলোকে সময়ে সময়ে সার্ভিসিং না করালে বা ত্র“টিপূর্ণ থাকলে, তা থেকেও বিস্ফোরণের কারণ হতে পারে, যেটা দু-তিন বছর আগে গুলশানে আরব আমিরাতের ভিসা সেন্টারে ঘটেছিল।

ভবনের নথি মেলেনি, সাত দিনের মধ্যে অন্য ভবনের তালিকা : বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজউকের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে আসেন। পরিদর্শন শেষে জানান, ঘটনার তিন দিনেও রাজধানীর সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের কাগজপত্র খুঁজে পায়নি তারা। রাজউকের সদস্য (উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাশ বলেন, নথির খোঁজ করা হচ্ছে। নথি পাওয়া গেলে বোঝা যাবে, ভবনটির কত তলার অনুমোদন ছিল। তিনি বলেন, অনেক পুরোনো এই ভবনের নথি ম্যানুয়ালি রাখা। বুধবার শবেবরাতের ছুটি থাকায় নথি খুঁজতে দেরি হয়েছে। কত তলার অনুমোদন ছিল, সেটা নথি দেখলে জানা যাবে। দুর্ঘটনার তিন দিনেও নথি পাওয়া যাচ্ছে না কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তন্ময় দাশ বলেন, ২০১৯ সালের মে মাস থেকে রাজউকে নতুন নকশাগুলো ডিজিটালাইজড করা হয়েছে। আগের নথিগুলোরও সফটকপি তৈরি করা হচ্ছে।

তবে আগামী সাত দিনের মধ্যে শহরের যত ভবনের বেজমেন্টে রেস্টুরেন্ট ও মার্কেট রয়েছে, সেটির তালিকা করা হবে বলে জানান রাজউকের সদস্য (উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ)। তিনি বলেন, রাজউকের ৮টি জোনের ২৪টি সাবজোনেই সরেজমিন পরিদর্শন করে তালিকা করা হবে। এসব মার্কেট ও রেস্টুরেন্টে ভেন্টিলেশন রয়েছে কিনা, অনুমোদন নেওয়া হয়েছে কিনা, এই বিষয়গুলো দেখা হবে।

ভবনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত : ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি ভেঙে ফেলা হবে নাকি সংস্কার করা হবে তা দ্রুত জানানো হবে বলে জানিয়েছেন রাজউকের তদন্ত কমিটির সদস্য মেজর (অব.) শামসুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টায় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, বেজমেন্ট ও নিচতলার কলাম ও পিলার যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এ অবস্থায় দ্রুত সময়ের মধ্যেই জানানো হবে কী করা হবে। তবে তার আগে ভবনটি এখন ঝুঁকিপূর্ণ। তাই প্রথমে এটাকে স্থিতিশীল (স্টবল) করতে হবে। এরপর জানা যাবে এটি সংস্কার করলে নিরাপদ হবে নাকি ঝুঁকি থাকবে। ভবনটি যাতে পড়ে না যায় সে ব্যবস্থা করার পর সামনের সড়ক যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে জানান রাজউকের এই কর্মকর্তা।

আলামত সংগ্রহে প্রতিবন্ধকতা : এদিকে ঘটনার পর পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটসহ একাধিক সংস্থা বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধানে কাজ করছে। তবে এখনো ভবনের বেজমেন্টের বিশাল এলাকা আলামত সংগ্রহের বাইরে রয়েছে। ভবনের নড়বড়ে অবস্থার কারণে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা সেখানে প্রবেশ করতে পারছেন না। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, তদন্ত সংস্থাসহ সবাই এখন পর্যন্ত মনে করছে, ভবনের নিচ থেকেই বিস্ফোরণের উৎপত্তিস্থল। সেখানে পৌঁছে যদি আমরা আলামত সংগ্রহ করতে পারি, সেক্ষেত্রে পরীক্ষা করে আমরা বলতে পারব, কোনো ধরনের দাহ্য পদার্থ আদৌ জমে ছিল কিনা।

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিদর্শন : বৃহস্পতিবার বিকালে বিস্ফোরণস্থল পরিদর্শনে যান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা। এই দক্ষিণ সিটি করপোরেশনই ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ উলে­খ করে সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষেধ সংবলিত ব্যানার টানিয়ে দিয়েছিল। অথচ তারা যখন পরিদর্শনে যায় তখন কোনো সুরক্ষা সরঞ্জাম ছিল না। এতে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের উপস্থিত সদস্যদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

এই দলে ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আহমেদ, প্রধান নগর-পরিকল্পনাবিদ সিরাজুল ইসলাম, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন এবং পরিবেশ, জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খায়রুল বাকেরসহ আরও কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী।

পরিদর্শন শেষে দক্ষিণ সিটির প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আহমেদ বলেন, সব ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়ে মূল্যায়নের জন্য নিয়মিত সভা করা হয়। হঠাৎ এই বিপর্যয় নিয়ে তাৎক্ষণিক একটি সভা করা হয়েছে। পরে ভবনটি বাস্তব পরিদর্শনে আসা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ ছাড়া দক্ষিণ সিটির আওতায় যেসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে, সেগুলো নিয়মিতভাবে পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাতে অন্তত দুর্ঘটনার আগে সতর্ক করা সম্ভব হবে। এ সময় তিনি সবাইকে সচেতন হওয়ারও আহ্বান জানান।

মামলা ও গ্রেফতার : বিস্ফোরণের ঘটনায় ভবনটির মালিক, তত্ত্বাবধানকারী ও কয়েক দোকানিকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। সেখান থেকে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টার থেকে এ কথা জানানো হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন-ভবনমালিক ওয়াহিদুর রহমান ও মতিউর রহমান এবং ভবনের একটি দোকানমালিক আবদুল মোতালিব হোসেন ওরফে মিন্টু। তাদের দুই দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

ভবনটির মালিক রেজাউর রহমান নামের প্রয়াত এক ব্যক্তি। তিনি মারা যাওয়ার পর তার তিন ছেলে ওয়াহিদুর রহমান, মশিউর রহমান ও মতিউর রহমান মালিক হন। তাদের মধ্যে বড় ভাই ওয়াহিদুর রহমান ও ছোট ভাই মতিউর রহমান ভবনটি পরিচালনা করেন। মেজো ভাই মশিউর রহমান লন্ডনপ্রবাসী।

নিখোঁজ দাবি করলে খুঁজবে ফায়ার সার্ভিস : কোনো স্বজনের নিখোঁজ দাবি না থাকায় ভবনটিতে আপাতত তল­াশি চালানো হচ্ছে না। তবে এখনই উদ্ধার অভিযানে ইতি টানা হচ্ছে না। ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের উপসহকারী পরিচালক বজলুর রশিদ বলেছেন, ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ভেতরে কংক্রিটের স্তূপ সরিয়েও তল্লাশি করা যাচ্ছে না। যেহেতু পুরো বেজমেন্ট তল্লাশি করা যাচ্ছে না, তাই ভেতরে কারও মরদেহ আছে কিনা, তা নিশ্চিত নই। তাই কোনো (নিখোঁজের) দাবিদার যদি আসে, তখন হালকা টুলস ব্যবহার করে তল্লাশি করব।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম