হাসপাতালে ঠাঁই নেই, আহতদের আকুতি
শিপন হাবীব, গাজী আনতেপ (তুরস্ক) থেকে
প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রাত-দিন বরফে ভিজে জবজবে তাঁবু। এতে আশ্রিত ভূমিকম্প ক্ষতিগ্রস্তরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন -যুগান্তর
ভূমিকম্পে মারাত্মক আহত হাজার হাজার মানুষ হাসপাতালের শয্যায় কাতরাচ্ছেন। আইসিইউতে থাকাদের অবস্থাও খারাপ।
অনেকের ক্ষতিগ্রস্ত হাত-পা কেটে ফেলতে হচ্ছে। অনেকে আবার মৃত্যুর মুখেও ঢলে পড়ছে। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে অনেকেরই ঠাঁই হচ্ছে না। হাসপাতালের বাইরে খোলা চত্বরে তাদের কোনোমতে চিকিৎসা চলছে।
এদিকে নিখোঁজ স্বজনদের জন্য বিভিন্ন ধ্বংসস্তূপ ঘিরে মানুষজনকে আহাজারি করতে দেখা গেছে। এর মধ্যেই অনেক স্থানে উদ্ধার অভিযান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সরকারি মহল থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে-এখন শুধু ধ্বংসস্তূপ ও ঝুঁকিপূর্ণ সব ভবন অপসারণ করা হবে।
তবে মাইলের পর মাইল ধ্বংসস্তূপ সরানো নিয়ে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। কতদিন সময় লাগবে তা অনুমান করতে পারছে কেউ। উদ্ধারকর্মীরা জানান, পরিস্থিতি এমন ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত কাউকে পাওয়ার সম্ভাবনা কম। আবার লাশ উদ্ধারের সম্ভবও দেখা যাচ্ছে না। কারণ লাশ পচেগলে নষ্ট হয়ে গেছে। তাদের চিহ্নিত ও উদ্ধার করা সম্ভব নয়।
ইতোমধ্যে বহু শহরে সরকারি উদ্ধার অভিযান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইসরা ইয়েতেক নামের এক নারী মারা যান। দ্বিতীয়বারের ভূমিকম্পে হাতায়ের দুটি উপশহরে তিনিসহ তিন শতাধিক বাসিন্দা মারাত্মক আহত হয়।
এ ছাড়া গাজি আনতেপসহ বাকি প্রদেশগুলোতেও কমবেশি আহত হয়। ৬ ফেব্রুয়ারি ভূমিকম্পের ছোবল থেকে বেঁচে যাওয়া আহতদের সংখ্যা কয়েক হাজার। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে জায়গা না পেয়ে অনেকের খোলা আকাশের নিচেই চিকিৎসা চলছে। অনেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাচ্ছে। মৃতদের ঠাঁই হচ্ছে গণকবরে। এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার ফাটলধরা স্থাপনায় প্রবেশ না করতে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে তুরস্ক সরকার। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ১০টি প্রদেশের মধ্যে আটটি প্রদেশকে রেড জোন ঘোষণা করায় বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশংকাকে উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা। আশ্রয় শিবিরে থাকা মানুষজন প্রচণ্ড শীতে কাবু হয়ে পড়ছে। তাঁবুর ওপর ও চারপাশে ক্ষণে ক্ষণে বরফ জমে যাচ্ছে। তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা সংস্থা ‘আফাদ’-এর পক্ষ থেকে আশ্রয়শিবিরে ড্রামগুলোকে চুলা আকারে কেটে আগুন জ্বালানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে এ সংখ্যা খুবই কম। এমন অবস্থায় আশ্রয় শিবিরগুলোতে কতদিন থাকতে হবে সেটাও অনিশ্চিত। আশ্রয় শিবিরগুলোতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে খাদ্যসামগ্রী পাঠানো হচ্ছে।
হাতায় শহরের বাসিন্দা এমির ইয়েতেক যুগান্তরকে জানান, প্রথমবারের ভূমিকম্পে ফাটলধরা ভবনের পাশে ছোট্ট একটি বাসায় তার মা অবস্থান করছিলেন। দ্বিতীয়বারের ভূমিকম্পে সেটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। গুরুতর অবস্থায় মাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার রাতে তিনি মারা যান। এমির জানান, অসংখ্য আহত মানুষ হাসপাতালে শুয়ে কাতরাচ্ছেন। যাদের অনেকের হাত-পা কেটে ফেলতে হচ্ছে। চিকিৎসাধীন অনেকের মৃত্যু হচ্ছে।
নিখোঁজ স্বজনদের খোঁজে বিভিন্ন ধ্বংসস্তূপ ঘিরে আহাজারি চললেও অনেক স্থানে উদ্ধার অভিযান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ধ্বংসস্তূপ এলাকা পুনঃনির্মাণের দিকে নজর দিচ্ছে সরকার। সেখানে বহুতল ভবন না করে উচ্চ প্রযুক্তিসম্পন্ন স্থাপনা তৈরি করা হবে। গ্রামের আদলে শক্তিশালী স্থাপনা নির্মাণ করা হবে।