ডিএসসিসির নতুন ১৮ ওয়ার্ডে মশার ভয়াবহ উপদ্রব
ডেমরা (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নবসম্পৃক্ত ১৮টি ওয়ার্ডে দিনে দিনে মশার উপদ্রব ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
বিশেষ করে রাজধানীর ডেমরা ও আশপাশের ওয়ার্ডগুলোতে মশার উপদ্রব বেশি। এতে মশাবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। নতুন ওয়ার্ডগুলোতে নজরদারি না থাকায় মশককুল যেন তাদের রাজত্ব কায়েম করেছে। কিছুতেই এদের বশ করা যাচ্ছে না। দিনে-রাতে অকপটে মানুষের শরীরে হুল ফুটাচ্ছে। এদের জন্য শান্তিতে কোনো কাজ করা যাচ্ছে না। প্রশ্ন উঠেছে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের কার্যক্রম নিয়ে।
সরেজমিন দেখা গেছে, ডিএসসিসির ৬৬ থেকে ৭৫ নম্বর ওয়ার্ড অভ্যন্তরীণ পানি নিষ্কাশন খাল দিয়ে বেষ্টিত। এসব খালের পানি পচে কালচে রঙ ধারণ করে চারদিকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এছাড়া ৬৭, ৬৮, ৬৯, ৭০ ও ৭৫ নম্বর ওয়ার্ডের কোল ঘেঁষে বয়ে চলেছে শীতলক্ষ্যা, বালু ও নড়াই নদী এবং দেবধোলাই খাল। ওইসব জলাশয়ের পানিরও একই অবস্থা। এই পানিতেই বৃদ্ধি পাচ্ছে মশার প্রজনন ক্ষেত্র।
নবসম্পৃক্ত ওয়ার্ডগুলোতে শুরু থেকেই লক্ষ করা গেছে, মশা নিধনের ক্ষেত্রে উপযুক্ত পরিকল্পনা ও চিন্তাভাবনার অভাব যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে জবাবদিহিতা ও মনিটরিংয়ের অভাব। কোথাও কোথাও ওষুধ ছিটিয়ে কিংবা ফগার মেশিন চালিয়ে মশা দমন আদৌ সম্ভব নয়। মশা দমন ও নিধন করতে হলে মশার প্রজননক্ষেত্রের দিকে সর্বাগ্রে দৃষ্টি দিতে হবে বলে অভিমত স্থানীয়দের। কার্যত এখানে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড় হয়ে আছে সর্বত্রই। রয়েছে মাইলের পর মাইল খোলা নর্দমা। আর এসব জায়গায় ফেলা ময়লা ঠিকমতো পরিষ্কার করা হয় না। ফলে ময়লা ফেলার স্থানগুলোও মশা প্রজননের একেকটা উৎকৃষ্ট ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।
এ বিষয়ে ওয়ার্ড কাউন্সিলররা বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত ওষুধ ছিটানোসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলেও খাল ও নর্দমাসহ নদ-নদীর পচা পানির কারণে মশার উৎপাত কমছে না। এক্ষেত্রে আবর্জনা ফেলার স্থানগুলো সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে অধিবাসীদের, যাতে ওই সব স্থানে মশা জন্ম নিতে না পারে।
অভিযোগ রয়েছে, মশার অতিরিক্ত প্রজননক্ষেত্র সৃষ্টি হওয়ায় নতুন ১৮টি ওয়ার্ডে মানুষ ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গি, চিকুনগুনিয়া, ফাইলেরিয়া, পীতজ্বরসহ নানা রোগে সংক্রমিত হচ্ছেন। অতিরিক্ত মশা নিধন করা না গেলে মশার কামড়ে গর্ভবতী মা ও শিশুর মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। ইতোমধ্যে এলাকাগুলোতে ফাইলেরিয়া বা গোদ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই। এই রোগটি কিউলেক্স মশার কামড়ে হয়ে থাকে।
ডিএসসিসির ৬৮ নম্বর ওয়ার্ডের সারুলিয়া জেনারেল হাসপাতালের ডা. শামীম মিছির যুগান্তরকে বলেন, যত্রতত্র বর্জ্য ফেলে স্থায়ী ভাগাড় তৈরি করায় এর চারপাশের লোকজন মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন। ভাগাড়ে অতিরিক্ত মশা জন্মায়। এছাড়া চিকুনগুনিয়া, ওয়েস্ট নাইল, লা ক্রস এন্সেফালাইটিস, রিফ্ট ভ্যালি ফিভারের মতো রোগ মশার কারণে হয়ে থাকে।
ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির মোবাইল ফোনে যুগান্তরকে বলেন, আমরা মশার ওষুধ কিনছি আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বিচার করে। এক্ষেত্রে ল্যাব ও মাঠে পরীক্ষিত মশার ওষুধ কেনা হচ্ছে, যা ৯৯ শতাংশ কার্যকর। তবে ওষুধ ৮০ শতাংশ কার্যকর হলেও মশা নিধন সম্ভব। আর ডিএসসিসির অন্যান্য ওয়ার্ডের মতো নতুন ওয়ার্ডগুলোতেও একই মশার ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। তবে নতুন ওয়ার্ডে অভ্যন্তরীণ খাল, নদ-নদী ও খোলা নর্দমা থাকায় মশার প্রজননক্ষেত্র বেশি। এগুলো পরিষ্কারের কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া ব্যক্তিগত অনেক জলাশয় রয়েছে যেগুলো মালিকরা পরিষ্কার করে না বিধায় মশা বাড়ছে ওখানে।