নির্বাচনকেন্দ্রিক জোটের তৎপরতা দুদলের
গুরুত্ব বাড়ছে ছোট দলের
হাসিবুল হাসান ও তারিকুল ইসলাম
প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি জোট গঠন নিয়ে এখন ব্যস্ত সময় পার করছে।
মান-অভিমান ভুলে ১৪ দলীয় জোটকে আবারও চাঙা করতে চাইছে আওয়ামী লীগ। জেলা পর্যায়ে জোটকে শক্তিশালী করতে সমন্বয় কমিটি গঠনের কাজও চলছে। অপরদিকে সরকারের পদত্যাগসহ দশ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে আছে বিএনপি।
দাবি বাস্তবায়নে ‘কৌশলগত’ কারণে নিজেরা কোনো জোটে না থেকে ভিন্ন জোট গঠনে নেতৃত্ব দিচ্ছে দলটি। ইতোমধ্যে চারটি জোট গঠন করেছে। আরও জোট গঠনে চলছে তৎপরতা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সারা বছর গুরুত্ব না থাকলেও নির্বাচনের আগে নামসর্বস্ব ছোট দলগুলোকে কাছে টানে বড় দুদল। ভোটের মাঠে অস্তিত্ব নেই, এমন দল নিয়েও নতুন জোট গড়ছে। এ ধরনের জোট বাস্তবে কতটা ভূমিকা পালন করবে তা সময়ই বলে দেবে
‘অভিমান ভাঙিয়ে’ শরিকদের পাশে চায় আ.লীগ
হাসিবুল হাসান
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ১৪ দলীয় জোটকে আবারও চাঙা করতে চাইছে আওয়ামী লীগ। শরিকদের ‘মান-অভিমান’ ভাঙিয়ে জোটকে সক্রিয় করতে চায় তারা। এরই অংশ হিসাবে জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনে পাঁচটি আসনের দুটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে জোট শরিকদের। ইতোমধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচনে জোটগতভাবে অংশ নেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছে তারা। জেলা পর্যায়ে জোটকে শক্তিশালী করতে সমন্বয় কমিটি গঠনের কাজও চলছে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির পাশাপাশি জেলা পর্যায়েও নানা কর্মসূচির কথাও ভাবা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ ও শরিক দলের নেতারা বলছেন, ১৪ দলীয় জোটের কর্মসূচি বাড়ানো এবং ঐক্য আরও সুদৃঢ় করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু যুগান্তরকে বলেন, ১৪ দলীয় জোট ঐক্যবদ্ধ। আমরা নিয়মিত সভা-সমাবেশ ও কর্মসূচি পালন করছি। আলাপ-আলোচনা করছি। সামনে আমাদের কার্যক্রম আরও বাড়বে। আমরা জেলাভিত্তিক নানা অনুষ্ঠান-কর্মসূচি করব। প্রতিটি দলেরও কার্যক্রম চলছে। জেলা পর্যায়ে জোটকে আরও শক্তিশালী করার পদক্ষেপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটার কার্যক্রম চলছে। অনেক জায়গায় হয়েছে, অনেক জায়গায় হচ্ছে। এটা করার জন্য ইতোমধ্যে বলাও হয়েছে। সুতরাং এটা চলছে।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন যুগান্তরকে বলেন, একসঙ্গে পথ চলতে গেলে একটু ঠোকাঠুকি লাগে। আবার ঠিকও হয়ে যায়। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনও জোটগতভাবে করার বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত তো আছেই। আমরা একসঙ্গে আছি। একসঙ্গেই থাকব। ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি, থাকব। নির্বাচন সামনে রেখে জোটের কর্মসূচি বাড়ানো এবং ঐক্য আরও সুদৃঢ় করার পরিকল্পনা রয়েছে কি না-জানতে চাইলে তিনি বলেন, হ্যাঁ, সেটা তো আছেই।
২০০৪ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদারের লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট ২৩ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বাধীন ওয়ার্কার্স পার্টি, হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন জাসদসহ প্রধানত কয়েকটি বাম দল নিয়ে আওয়ামী লীগ ১৪ দলীয় জোট গঠন করে। পরবর্তী সময়ে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি, তরিকত ফেডারেশনসহ আরও কয়েকটি দল এতে যোগ দেয়। আওয়ামী লীগ বিভিন্ন সময়ে একে ‘আদর্শিক জোট’ হিসাবে বর্ণনা করেছে। তবে তাদের আরেকটি অঙ্গীকার ছিল-‘একসঙ্গে আন্দোলন, একসঙ্গে নির্বাচন এবং একসঙ্গে সরকার পরিচালনা’।
নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ের পরে গঠিত সরকারে শরিকরা একাধিক মন্ত্রীসহ সরকারে ছিল। তবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ের পর শরিকবিহীন সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। এরপর থেকেই শরিকদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে শুরু করে আওয়ামী লীগের। শরিক নেতাদের নানা সময় সরকারের প্রকাশ্য সমালোচনাও করতে দেখা গেছে। আওয়ামী লীগ ‘একলা পথ’ চলছে বলেও শরিকদের কারও কারও অভিযোগ ছিল। শরীফ নুরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ ভেঙে সৃষ্ট ‘বাংলাদেশ জাসদ’ ইতোমধ্যে জোট ছেড়েছে। তাদের অভিযোগ ছিল-যে নীতি ও আদর্শ নিয়ে ১৪ দলীয় জোট গঠিত হয়েছিল, বাস্তবে তা আর নেই।
গত বছরের মার্চে ১৪ দলের শরিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বৈঠকে জোটনেত্রী শেখ হাসিনা জানান, জোট থাকবে এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা ঐক্যবদ্ধভাবে অংশ নেবেন। একই সঙ্গে জেলা পর্যায়ে জোটকে আরও শক্তিশালী করতে সমন্বয় কমিটি গঠনের নির্দেশনাও দেন তিনি। এরপর থেকে সাংগঠনিকভাবে ১৪ দলের তৎপরতা বাড়াতে ঘন ঘন বৈঠক করতে দেখা গেছে জোটনেতাদের। ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুর পক্ষ থেকে জেলায় জেলায় চিঠি দিয়ে শরিকদের নিয়ে বৈঠক করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
জানতে চাইলে গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদত হোসেন বলেন, ১৪ দলীয় জোট আদর্শিক জোট। আমাদের ঐক্য নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে অনেকেই নানা ধরনের কথা বলছে, নানা ষড়যন্ত্রও হচ্ছে। সামনে হয়তো এ ধরনের আরও অপচেষ্টা হবে। সার্বিক বিষয় নিয়ে আমরাও আলাপ-আলোচনা করছি। আমরা জোটগতভাবে মাঠে থাকব।
ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বলেন, আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে জোটের মধ্যে গণতন্ত্রচর্চার অভাব রয়েছে। নির্বাচনসহ অনেক বিষয়েই জোটের মধ্যে যে ধরনের আলোচনা হওয়া দরকার, তা হয় না। ১৪ দলীয় জোটগতভাবে যে সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়, সেটাও অনেক ক্ষেত্রে পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন হয় না। জেলা পর্যায়ে জোটকে শক্তিশালী করার পদক্ষেপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা আংশিক কার্যকর হয়েছে।
আওয়ামী লীগ ও জোটের শরিক দলের নেতারা মনে করেন, সামনে জাতীয় নির্বাচন। বিএনপিসহ তাদের শরিকরা নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছে। এই মুহূর্তে ১৪ দলীয় জোটকেও আরও সক্রিয় করতে হবে। নিজেদের মধ্যকার কোনো সমস্যা থাকলে তা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। এজন্য সামনের দিনে তাদের আরও সক্রিয় হতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে থাকতে হবে। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সহসভাপতি এবং ঢাকা পূর্বের সভাপতি মো. শহীদুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ১৪ দলকে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে আরও সক্রিয় করলে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিকে মোকাবিলা করা সহজ হবে। এ বিষয়ে আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে। ঢাকাসহ সারা দেশে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে জোটকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।
আন্দোলনে বিএনপি ঘরানা জোটের পরিধি বাড়ছে
তারিকুল ইসলাম
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা সমীকরণ। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নির্বাচনমুখী হলেও বিএনপি ও সমমনা দলগুলো এখন আন্দোলনমুখী। সরাসরি কোনো জোটে না থাকলেও সরকারের পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ ১০ দফা দাবিতে মাঠের যুগপৎ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে বিএনপি। আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে চারটি জোট গঠন হয়েছে। এসব জোটের পরিধি বাড়ানোর পাশাপাশি আরও নতুন জোট গঠনেরও তৎপরতা চলছে। তবে এসব জোটে থাকা অধিকাংশই নিবন্ধনহীন, নাম-প্যাডসর্বস্ব দল। এমনকি অনেকের দলীয় কার্যালয় পর্যন্ত নেই। মাঠের কর্মসূচিতে তেমন নেতাকর্মী দেখা যায় না। চার-পাঁচটি দল বাদ দিলে বাকিগুলোর সারা দেশে কোনো ভোট ব্যাংকও নেই। ছয় মাসের মধ্যে এসব জোট গঠন হলেও এরই মধ্যে অভ্যন্তরীণ লড়াইও শুরু হয়েছে। আলাপ-আলোচনা না করে কর্মসূচি নির্ধারণ, যথাযথ মূল্যায়ন না করাসহ নানা ইস্যুতে চলছে টানাপোড়েন।
বিএনপি নেতারা বলছেন, দেশের চলমান সংকট নিরসনে ডান, বামসহ সব দল, সংগঠন, সুশীল, বুদ্ধিজীবী ছাড়াও সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে জাতীয় ঐক্যের ঘোষণা দিয়েছে দল। এখানে নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠী নয়, সবাইকে নিয়েই এগোতে চাইছে দলটি। তাই জোট, দল, সংগঠন কিংবা ব্যক্তির সংখ্যাতত্ত্ব দিয়ে বিএনপি তাদের চলমান গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনকে পরিমাপ করছে না; গুরুত্ব দিচ্ছে ঐক্যকে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, দেশে গণতন্ত্র নেই, মানবাধিকার নেই। জনগণের ভোটাধিকার থেকে শুরু করে সব নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যার যে অবস্থান থেকে প্রতিবাদ করতে হবে। সেখানে কে কত বড়, সেটা মুখ্য বিষয় নয়। মূলত এই সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে যারাই এগিয়ে আসবে, তাদেরই সাধুবাদ জানাব। সেটা সংগঠন হতে পারে, পেশাজীবী কিংবা ব্যক্তিও হতে পারেন।
বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল আছে ৩৯টি। এছাড়া আরও শতাধিক দলের নাম আছে রাজনীতির মাঠে। এর মধ্যে বেশির ভাগই নামসর্বস্ব, ব্যক্তিনির্ভর। এমনকি নিবন্ধিত দলের মধ্যেও নামসর্বস্ব দল আছে। যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোর মধ্যে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সারা দেশে ভোট ব্যাংক রয়েছে। এছাড়া এলডিপি ও ১২ দলীয় জোটে থাকা কল্যাণ পার্টি, গণতন্ত্র মঞ্চের জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন ও গণঅধিকার পরিষদসহ কয়েকটি দল ছাড়া আর কারও তেমন ভোট নেই।
জানা যায়, বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনে সাতদলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, ১২ দলীয় জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, চার দলের বাম গণতান্ত্রিক ঐক্য, ১৫ সংগঠনের সমমনা গণতান্ত্রিক জোট ছাড়াও এলডিপি, গণফোরাম রয়েছে। প্রায় একই দাবিতে ভিন্ন প্ল্যাটফরমে আন্দোলন করছে জামায়াতে ইসলামীও। এসব জোট ও দলের মধ্যে মাত্র সাতটি ইসি নিবন্ধিত। ১৩টি বিভিন্ন দলের খণ্ডিত অংশ। আবার সাম্যবাদী দল ও ইসলামী ঐক্যজোট রয়েছে দুই জোটেই। আবার সমমনা গণতান্ত্রিক জোটের ১৫ সংগঠন কোনো রাজনৈতিক দল নয়। তারা বিভিন্ন ইস্যুতে জাতীয় প্রেস ক্লাবকেন্দ্রিক আলোচনাসভা, মানববন্ধনের মতো বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে।
যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসাবে ৫৪ দল গণমিছিল, গণ-অবস্থান ও মিছিল-সমাবেশে কর্মসূচি পালন করেছে। তবে বিএনপিসহ কয়েকটি দল বাদে এসব জোটের নেতাকর্মীর উপস্থিতি ছিল হতাশাজনক। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গণতন্ত্র মঞ্চের সাত দলের মধ্যে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ইসিতে নিবন্ধিত। এর বাইরে নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কারও আন্দোলনে রয়েছে। তবে তাদের নিবন্ধন নেই। জোটের নেতা আ স ম আবদুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না, কমরেড সাইফুল হক, জোনায়েদ সাকি, ড. রেজা কিবরিয়া আর ভিপি নুরুল হক নূরের মতো হেভিওয়েট নেতা থাকলেও সারা দেশে কর্মসূচি পালনের মতো শক্তি তাদের দলগুলোর নেই। তাই শুধু ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে তা পালন করছে তারা। তাতেও তেমন নেতাকর্মী দেখা যায় না। এর মধ্যে আবার মঞ্চের সঙ্গে দূরত্ব চলছে নূরের গণঅধিকার পরিষদের। যে কারণে সর্বশেষ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে তার দল অংশ নেয়নি।
১২ দলীয় জোটের মধ্যে কল্যাণ পার্টি ও মুসলিম লীগ ইসি নিবন্ধিত। তবে মুসলিম লীগ দ্বিখণ্ডিত হয়ে উভয় জোটের মধ্যেই আছে। কোন পক্ষের হাতে নিবন্ধন রয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। দশম সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টি থেকে বেরিয়ে আসা নেতাদের নিয়ে জাপা (কাজী জাফর) অংশ রাজনীতিতে সক্রিয়। তবে হেভিওয়েট নেতা থাকলেও ততটা কর্মী নেই দলটির। প্রয়াত নেতা শফিউল আলম প্রধানের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তার গড়া জাতীয় গণতান্ত্রিক দলও (জাগপা) দুই অংশে বিভক্ত। বাতিল হয় ইসির নিবন্ধনও। এর একটি অংশে তার মেয়ে ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অন্য অংশে রয়েছেন খন্দকার লুৎফর রহমান। তারাও এখন কর্মী সংকটে ভুগছে। ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামিক পার্টি দলগুলো মূল দলের খণ্ডিত অংশ। নেতাসর্বস্ব এসব দলের তেমন কর্মী নেই। সাম্যবাদী দলেরও একই হাল। লেবার পার্টি, জাতীয় দল, বাংলাদেশ এলডিপি নিজেদের অস্তিত্ব প্রমাণে কাজ করছে।
১২ দলীয় জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের অন্তর্ভুক্ত কোনো শরিক দলেরই নিবন্ধন নেই। কার্যালয় নেই বেশির ভাগ দলের। আবার বেশির ভাগ দলই মূল দল থেকে ছিটকে আসা খণ্ডিত অংশ। ২০ দলীয় জোট থেকে ইসলামী ঐক্যজোট বেরিয়ে গেলে অ্যাডভোকেট মাওলানা আবদুর রকিবের নেতৃত্বে একটি খণ্ডিত অংশ জোটের সঙ্গে থেকে যায়। এ অংশের তেমন নেতাকর্মী নেই। আবার দলটি ১২ দলীয় জোট ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট-দুটিতেই রয়েছে। একই অবস্থা চারদলীয় জোট গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যে। বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (মার্কসবাদী-লেলিনবাদী), সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি, সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টি ও প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল নিয়ে এই জোট। তাদেরও তেমন লোকবল নেই। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ছাড়া আর কোথাও যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি পালন করতে পারেনি। এছাড়া ১৫ সংগঠনের সমমনা গণতান্ত্রিক জোটে বেশির ভাগেরই অস্তিত্ব নেই। ‘ওয়ার ম্যান ওয়ান শো’ হিসাবে খ্যাত তারা। জাতীয় প্রেস ক্লাবভিত্তিক বিভিন্ন সভা-সেমিনার করে কী প্রক্রিয়ায় এসব সংগঠনকে নিয়ে জোট গঠন করা হয়েছে, তা নিয়ে খোদ বিএনপির মধ্যেই সমালোচনা চলছে।
এদিকে শুরুতে যুগপৎ আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামী থাকলেও সর্বশেষ কর্মসূচিতে তারা অংশ নেয়নি। বিএনপির সঙ্গে টানাপোড়েনের কারণে তারা ভিন্ন দিনে কর্মসূচি পালন করছে। এছাড়াও নেতাকর্মীদের যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি নির্ধারণে গণতন্ত্র মঞ্চের মতামতকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন অন্য জোটের শীর্ষ নেতারা। এ নিয়ে ১২ দলীয় জোটের সঙ্গেও কিছুটা মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। যে কারণে এ জোট একই দাবিতে সোমবার ঢাকায় কর্মসূচি পালন না করে চট্টগ্রামে করেছে। আর ঢাকায় করেছে পরদিন মঙ্গলবার।
এ প্রসঙ্গে ১২ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান যুগান্তরকে বলেন, আমাদের সঙ্গে বিএনপির কোনো মতবিরোধ বা মতানৈক্য কোনো কিছুই নেই। তবে সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে কর্মসূচি নির্ধারণ করা হলে আগামী দিনে পথ চলতে আরও সহজ বা মসৃণ হবে। আশা করি, বিএনপি কোনো বিশেষ জোটকে প্রাধান্যও দেবে না। আবার কোনো জোটকে অবমূল্যায়নও করবে না। নতুন যারা মিত্র, তাদের সঙ্গে বিএনপি তাদের মতো করে সম্পর্ক করুক। কিন্তু আমরা যারা পরীক্ষিত পুরোনো মিত্র (২০ দলীয় জোটে ছিলেন), তাদের যেন অবমূল্যায়ন করা না হয়-সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।