নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশে দমনপীড়ন বেড়েছে: এইচআরডব্লিউ
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশে বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যদের ওপর সহিংসতা ও দমনপীড়ন বেড়েছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। সংস্থাটির প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট ২০২৩’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে বৃহস্পতিবার এ উদ্বেগের কথা উঠে আসে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, রোহিঙ্গা শরণার্থীরা নিরাপদে ও স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারছে না। তারা দুঃসহ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। বাংলাদেশি নিরাপত্তা বাহিনী এবং অন্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর চাঁদাবাজি, হুমকি ও দুর্ব্যবহারের শিকার হচ্ছে রোহিঙ্গারা।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলী বলেছেন, আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর চাপে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। অন্যদিকে দমনপীড়ন বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে তাদের প্রতিশ্রুতি মিথ্যায় পর্যবসিত হচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ যেন আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতিতে নির্ভয়ে নিজেদের মতপ্রকাশ করতে পারে এবং নেতা নির্বাচন করতে পারে, সে ব্যাপারে জোর দিতে দাতাগোষ্ঠী ও অন্য কৌশলগত অংশীদারদের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
আন্তর্জাতিক এই মানবাধিকার সংগঠন তাদের ৭১২ পৃষ্ঠার ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট ২০২৩-এর ৩৩তম সংস্করণে বিশ্বের ১০০টি দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে।
প্রতিবেদনটির সূচনা প্রবন্ধে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের নির্বাহী পরিচালক তিরানা হাসান বলেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধকে ঘিরে বিশ্বের সংঘবদ্ধতা আমাদের অসাধারণ সম্ভাবনার কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। এতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার মানবাধিকারের বাধ্যবাধকতা উপলব্ধি করতে পারছে। ছোট-বড় সব দেশের উচিত মানবাধিকার রক্ষার নীতিতে অটল থাকা এবং মানবাধিকার রক্ষায় একযোগে কাজ করা।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং এর কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও বলপূর্বক গুমের ঘটনা কমেছে। তবে সরকার র্যাবের সংস্কারের পরিবর্তে নিষেধাজ্ঞার অভিযোগগুলো খারিজ করে দিয়েছে এবং গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারগুলোকে ভয়ভীতি দেখানো শুরু করেছে বলেও অভিযোগ করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
বাংলাদেশের সরকার কঠোর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের (ডিএসএ) অধীনে গ্রেফতার অব্যাহত রেখেছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে। গত বছরের নভেম্বরে বিরোধীদলীয় নেত্রী সুলতানা আহমেদকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। সুলতানা আহমেদের বিরুদ্ধে র্যাবের অভিযোগ, তিনি গত বছরের সেপ্টেম্বরে এক সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করেছিলেন।
বিরোধী দল বিএনপি দাবি করেছে, তাদের দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সরকার অন্তত ২০ হাজার মামলা দিয়েছে। বেশির ভাগ মামলাই অজ্ঞাতনামা। এই মামলাগুলোকে আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারা রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্যদের বাড়িতে অভিযান চালানোর জন্য ওয়ারেন্ট হিসাবে ব্যবহার করেছেন। এ ধরনের আচরণকে প্রকাশ্য রাজনৈতিক হয়রানি ও ভীতিপ্রদর্শন বলে অভিহিত করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশের ভিন্নমতাবলম্বীদেরও ছাড়ছে না ক্ষমতাসীন সরকার। গত বছরের নভেম্বরে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট ফেসবুকে ‘রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার’ অভিযোগে প্যারিসে বসবাসরত বাংলাদেশের ব্লগার পিনাকী ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে ডিএসএর অধীনে মামলা দিয়েছে। এছাড়া একই সময়ে ঢাকায়ও দুজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ।
স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো বলেছে, বিদেশে বসে যারা ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ কার্যকলাপ করছে, তাদের তালিকা তৈরি করেছে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সরকার মানবাধিকার সংস্থাগুলোর ওপরও চাপ সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। সংগঠনটি বলেছে, মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’-এর নিবন্ধন নবায়ন করেনি সরকার।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ অভিযোগ করে বলেছে, বাংলাদেশের কর্মকর্তারা রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরগুলোয় স্কুল বন্ধ করে দিয়েছে, নির্বিচারে দোকানপাট ভেঙে ফেলছে এবং রোহিঙ্গাদের চলাফেরায় বাধা দিচ্ছে। আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবি) সদস্যরা শরণার্থীদের কাছে চাঁদাবাজি করছে, নির্বিচারে গ্রেফতার ও নির্যাতন করছে।
গত বছর বাংলাদেশ সরকার প্রায় ৮ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ভাসানচরে স্থানান্তর করেছে। সেখানে সব মিলিয়ে অন্তত ২৮ হাজার শরণার্থী রয়েছে। কিন্তু সেখানে খাদ্য ও ওষুধের চরম ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
শরণার্থীরা নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তাদের অবাধ চলাচলে বাধা দেওয়া হচ্ছে। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) চাইলেও শরণার্থীদের মূল ভূখণ্ডে ফিরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।