
প্রিন্ট: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:২৭ পিএম
রোগীদের বিদেশ গমন বৃদ্ধি, দেশের স্বাস্থ্য খাত উন্নত করুন

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
এটা একটা প্যারাডক্স বটে। দিন যত যাচ্ছে, দেশের স্বাস্থ্য খাতের অবকাঠামো তত সমৃদ্ধ হচ্ছে। এ খাতে বেড়ে চলছে সরকারি বরাদ্দ ও বেসরকারি বিনিয়োগ। জটিল রোগের চিকিৎসাও কমবেশি হচ্ছে। প্যারাডক্স হলো, এরপরও বিদেশমুখী রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
নানা অন্তরায় ও চিকিৎসার বেশি ব্যয় সত্ত্বেও প্রতিবছর অসংখ্য রোগী দেশের বাইরে যাচ্ছেন। এমনকি এ খাতের নীতিনির্ধারকরাও চিকিৎসা করাচ্ছেন বিদেশে। এর অন্যতম কারণ অবশ্যই আস্থাহীনতা। বিপুলসংখ্যক রোগী মনে করছেন না যে, দেশের চিকিৎসা ফলদায়ক হবে। দেশে শতাধিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, একটি সুপার বিশেষায়িত হাসপাতালসহ অনেক বিশেষায়িত হাসপাতাল, অসংখ্য প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রোগীদের সেবা দিচ্ছে।
কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে রোগ সঠিকভাবে নির্ণয় করতে না পারা এবং সেবা অব্যবস্থাপনার প্রচুর অভিযোগ উঠছে। রোগীদের পর্যাপ্ত সময় দিতে চিকিৎসকদের আন্তরিকতা ও আচরণের ঘাটতিসহ অন্তত ২১ কারণে চিকিৎসাব্যবস্থার প্রতি অনেকে আস্থা রাখতে পারছেন না। ফলে ব্যয় মেটাতে সক্ষম রোগীদের বড় অংশ ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোতেও চলে যাচ্ছেন। আমাদের এ দুর্বলতার সুযোগে বিদেশের মেডিকেল ট্যুরিজমে চলছে রমরমা ব্যবসা।
অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী, বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে সর্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজের মাধ্যমে সবার স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে স্বাস্থ্য খাতসংশ্লিষ্টরা প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো জরিপ চালিয়ে দেখেছে, মানুষ সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা নিয়ে সন্তুষ্ট নয়। গত বছর ৩৯ শতাংশ মানুষ সরকারি হাসপাতাল থেকে কোনো সেবাই পাননি। দেখা গেছে, সরকারি হাসপাতালের সাধারণ শয্যা পাওয়া থেকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তিতে দীর্ঘ সিরিয়াল দিতে হয়। রোগ নির্ণয়ে উন্নত চিকিৎসা সরঞ্জাম পরিচালনায় দক্ষ টেকনিশিয়ান সংকটও রয়েছে। অনেক সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অবকাঠামোগত ঘাটতিও চরমে। ওদিকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ও রেফারেল সিস্টেম গড়ে ওঠেনি।
এসব বাস্তবতার মধ্যেই গতকাল পালিত হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। এ দিবসে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেছেন। কিন্তু দেখা যাবে, এসব কথা অচিরেই হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে। প্রকৃত প্রস্তাবে আমাদের যেসব দুর্বলতার কারণে রোগীরা উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছেন না এবং সক্ষমরা বিদেশে যাচ্ছেন, সেসব দুর্বলতা চিহ্নিত করাই প্রাথমিক কাজ। সীমাবদ্ধতাগুলো চিহ্নিত করতে পারলেই তা অতিক্রম করা সহজ হবে। আমরা এমন এক স্বাস্থ্য খাত দেখতে চাই, যার মাধ্যমে ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সবাই দেশেই উন্নত স্বাস্থ্যসেবা পাবে।