খেলাপি ঋণ ও অর্থ পাচার
কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে কি?

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

প্রতীকী ছবি
দুর্নীতি, অর্থ পাচার ও খেলাপি ঋণের কারণে দেশের অর্থনীতিকে যেমন সংকট কাটাতে বেগ পেতে হচ্ছে, তেমনি আর্থিক খাতও ধুঁকছে নানা সমস্যায়। বিগত সরকারের আনুকূল্যে ব্যবসায়ী, আমলা থেকে শুরু করে অনেকেই জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণের টাকা বিদেশে পাচার করে দেশের ব্যাংক খাতকে খাদের কিনারায় নিয়ে গেছে। সোমবার যুগান্তরের এক প্রতিবেদনে নাসা গ্রুপের নজরুল ইসলাম মজুমদারের ঋণের টাকা বিদেশে পাচারসহ ব্যাংক খাতে নজিরবিহীন জালিয়াতির তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। এতে দেখা গেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রায় সব নির্দেশ উপেক্ষা করে কীভাবে তার গ্রুপ ঋণের নামে ব্যাংক ও আর্থিক খাত থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছে। বর্তমানে নাসা গ্রুপের জাল-জালিয়াতি উদঘাটন করতে বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং সিআইডি তদন্ত করছে। ইতোমধ্যে এসব সংস্থার তদন্তের ভিত্তিতে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এখন পাচারের টাকা উদ্ধারের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
পাচার করা অর্থ উদ্ধারের প্রচেষ্টা ইতিবাচক, সন্দেহ নেই। বিগত সরকারের আমলে লুটপাটের কারণে সৃষ্ট খেলাপি ঋণের আগ্রাসী থাবায় বর্তমানে ব্যাংক খাত, বিশেষ করে পাঁচটি বড় ব্যাংক রীতিমতো বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনেই উঠে এসেছে, মোট খেলাপি ঋণের অর্ধেকেরও বেশি আটকে রয়েছে ওই পাঁচ ব্যাংকের কাছে। এ কারণে ওইসব ব্যাংকের মূলধন ও আয় কমে গেছে, বেড়েছে প্রভিশন ঘাটতি ও খারাপ সম্পদের পরিমাণ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক অবশ্য নীতি সহায়তা বাড়িয়ে আর্থিক দুর্বলতা কাটাতে সহায়তা করছে। ধীরে হলেও তাতে সুফল মিলছে। কিন্তু এ খাতকে শক্তিশালী করতে পাচার করা অর্থ ফেরত আনার দিকেই অধিক মনোযোগী হতে হবে বলে মনে করি আমরা। আগে আর্থিক খাতের খেলাপি ঋণ ও দুর্বলতাগুলো আড়াল করার যে সংস্কৃতি ছিল, তা যেন ভবিষ্যতে ফিরে না আসে সেদিকেও লক্ষ রাখা জরুরি।
আমরা দেখছি, এখনো খেলাপি ঋণ নবায়ন করতে বিশেষ ছাড় দেওয়া হচ্ছে। যদিও তা আপৎকালীন সমস্যা মোকাবিলার জন্য; কিন্তু এতে অতীতে যে সুফল মেলেনি, সে কথা ভুললে চলবে না। বড় গ্রাহকই হোক কিংবা ছোট, ব্যাংকগুলোকে বিনিয়োগযোগ্য তহবিলের সংকট এড়াতে সব গ্রাহকের বেলাতেই ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সংস্কৃতি গড়তে হবে। অন্যথায় লাভ দূরে থাক, ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতির পরিমাণই বরং বাড়বে।
পাচার করা অর্থ ফেরত আনার পাশাপাশি এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধেও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বারবার বলে এসেছি আমরা। শুধু তাই নয়, ব্যাংক খাতের ভেতরে থাকা অর্থ পাচারকারীদের সহায়তাকারীদেরও শনাক্ত করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে নিতে হবে কার্যকর ব্যবস্থা। যেসব দেশে অর্থ পাচার হয়েছে, সেসব দেশের সংশ্লিষ্ট আইন পর্যালোচনার পাশাপাশি বিদ্যমান আইনগুলো খতিয়ে দেখে প্রয়োজনে তা সংশোধন করতে হবে। অর্থ পাচারের পথ বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে দেশে যাতে নতুন করে কালোটাকার জন্ম না হয়, সে ব্যাপারেও পদক্ষেপ নিতে হবে। যেহেতু অর্থ পাচারের সঙ্গে হুন্ডির বিষয়টি সরাসরি জড়িত, সেহেতু হুন্ডি বন্ধেও নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ। অর্থাৎ অর্থ পাচার রোধে যা যা করা দরকার, এর সবই করতে অন্তর্বর্তী সরকার পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।