সংকটে আলুচাষি
ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আলু তোলার মৌসুম শুরু হয়েছে, তাই কৃষকদের মুখে হাসি থাকার কথা ছিল; কিন্তু হাসি তো নেই-ই, দেখা দিয়েছে উদ্বেগের রেখা। হ্যাঁ, আলু তোলার ধুম লেগেছে আর শুরুতেই ধস নেমেছে দামে। বর্তমান দামকে পানির দর বললেও ভুল হবে না। জমিতে বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১২ টাকা কেজিদরে। কৃষকরা বলছেন, গত এক দশকে আলুর দাম এত কম ছিল না। বলা বাহুল্য, উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ আলু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন উত্তরবঙ্গের আলুচাষিরা। মূল সংকট হলো, ক্রেতা না থাকায় কৃষকরা না পারছে আলু জমি থেকে বিক্রি করতে, আবার বুকিং না থাকায় পারছে না হিমাগারেও রাখতে? কৃষকরা বলছেন, গত বছর উত্তরাঞ্চলে প্রতিকেজি আলু সংরক্ষণের হিমাগার ভাড়া ছিল ৪ টাকা। এবার এক লাফে সংরক্ষণ ভাড়া বেড়ে হয়েছে ৮ টাকা। এবার আবহাওয়া ভালো থাকায় আলুর ফলন ভালো হয়েছে। বিপুল পরিমাণ আলু সংরক্ষণের বিষয়টি কৃষক সম্প্রদায়ের জন্য এক মহাসংকট হয়ে পড়েছে। বর্তমান অবস্থাটা হলো, আলু বিক্রি করে উৎপাদন খরচের অর্ধেকও উঠছে না। ফলাফল চরম হতাশা। কৃষক লাভের টাকা গুনবে কী, ব্যাংক ও মহাজনি ঋণ কীভাবে পরিশোধ করবে, সেটাই মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে।
কৃষক সমাজ যে আলুর ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না, এর পেছনের কারণ চিরাচরিত সিন্ডিকেটই। তৈরি হয়েছে হিমাগার মালিকদের সঙ্গে সিন্ডিকেটের যোগসাজশ। সিন্ডিকেটিজম এ দেশের বাজারব্যবস্থার এক অতি পুরোনো ক্ষতিকর রোগ। অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান হয়, এ রোগ অনিরাময়যোগ্য। বিগত প্রতিটি সরকারের আমলে দোর্দণ্ড প্রতাপে বাজারব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করেছে সিন্ডিকেট। সেই সিন্ডিকেট বর্তমান সরকারের আমলেও সক্রিয় রয়েছে। সিন্ডিকেটগুলো কেন ভাঙা হচ্ছে না, এ এক বড় প্রশ্ন। এটা না বোঝার কোনোই কারণ নেই, কোনো একটি কৃষিজাত পণ্যের ন্যায্যমূল্য না পেলে কৃষকরা পরের মৌসুমে সেই পণ্য উৎপাদনে অনাগ্রহী হয়ে পড়ে। আমরা সবাই চাই, ভোক্তাশ্রেণি যেমন ন্যায্যমূল্যে পণ্য ক্রয় করতে পারে, তেমনি কৃষক সম্প্রদায়ও যেন তার উৎপাদিত পণ্য ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে পারে। এ দুয়ের সমন্বয় ঘটাতে না পারলে উৎপাদন ও বাজারব্যবস্থা, দুই-ই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমরা আশা করব, সরকার শুধু আলুর নয়, সব ধরনের পণ্যের সিন্ডিকেট ভেঙে ফেলে বাজারের স্বাভাবিকতা নিশ্চিত করবে।