বৈদেশিক ঋণের অর্থ খরচে বহু বাধা
দূর করতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

বৈদেশিক ঋণের অর্থ ব্যয়ে বাধা দূর হওয়ার ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি না হওয়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক। জানা যায়, বছরের পর বছর পাইপলাইনে পড়ে আছে বৈদেশিক ঋণ ও অনুদানের প্রতিশ্রুত অর্থ। কিন্তু প্রয়োজনে খরচ করা যাচ্ছে না। এর নেপথ্যের মূল কারণগুলো বারবার আলোচনায় আসে। গতকাল যুগান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পাইপলাইনে পড়ে আছে বৈদেশিক ঋণ ও অনুদানের প্রতিশ্রুত অর্থ। প্রয়োজনে খরচ করতে না পারার পেছনে রয়েছে ডলার সংকটে এলসি না খোলাসহ ৫৫ বাধা। গত অর্থবছরের (২০২৩-২৪) ১৯টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বরাদ্দ পর্যালোচনা করে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। এতে দেখা গেছে, বাধাগুলোর অধিকাংশ দীর্ঘদিনের পুরোনো। লক্ষ করা গেছে, প্রতি অর্থবছর এসব বাধা চিহ্নিত করেই দায় সারে সংস্থাটি। কিন্তু সমাধানের লক্ষ্যে জোরালো উদ্যোগ নিতে দেখা যায় না। এ প্রতিবেদন সস্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে।
আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে মোট বরাদ্দ ছিল ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক অর্থ ছিল ৯৪ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। পরে অর্থবছরের মাঝপথে এসে বৈদেশিক অর্থের অংশে ১০ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা কাটছাঁট করে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৮৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। কিন্তু অর্থবছর শেষে সেই টাকারও পুরোপুরি ব্যয় করা সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত খরচ হয়েছিল ৭১ হাজার ৯৭৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। ফলে অব্যয়িত থেকে যায় ১১ হাজার ৫২৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা।
আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈদেশিক অর্থ ব্যয়ে অন্যতম বাধাগুলো হচ্ছে, ডলার সংকটে এলসি খুলতে না পারায় প্রকল্পের মালামাল আনা যায় না। এ ছাড়া অর্থছাড়ে দেরি, পরামর্শক নিয়োগে দেরি, ডলারের ঊর্ধ্বগতি ও চুক্তি করতে সময় লাগা, প্রকল্পের আওতায় কনস্ট্রাকশন ও সুপারভিশন ফার্ম নিয়োগে দেরি, দরপত্র প্রক্রিয়াকরণ শেষ না হওয়া, প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তন ইত্যাদি। বিশ্লেষকদের মতে, প্রকল্প বাস্তবায়নে বৈদেশিক অর্থ হোক আর সরকারি অর্থই হোক, বেশকিছু চিহ্নিত সমস্যার কথা বারবার আলোচনায় আসে। এসব সমস্যা উত্তরণে কেন বিস্তারিত গবেষণা হচ্ছে না, এটা এক প্রশ্ন। আমাদের দেশে সরকার পরিবর্তন হলে নীতিরও পরিবর্তন ঘটে। দেশে চলমান প্রকল্পের ওপরও এর প্রভাব পড়ে। বিভিন্ন দেশে সরকার পরিবর্তন হলেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে মৌলিক নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন হয় না। এসব সমস্যা উত্তরণে রাজনৈতিক দলগুলো আলোচনা করবে, এটাই কাম্য। আমরা আশা করব, বৈদেশিক ঋণের অর্থ খরচে সব ধরনের বাধা দূর করতে কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।