Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

আকাশপথে টিকিট নৈরাজ্য

অবিলম্বে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আকাশপথে টিকিট নৈরাজ্য

আন্তর্জাতিক রুটে উড়োজাহাজে ভ্রমণের টিকিট নিয়ে যে অরাজক পরিস্থিতি চলছে, তার অবসানে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। উল্লেখ্য, বিভিন্ন রুটে বিমান সংস্থাগুলো যাত্রীদের কাছ থেকে কয়েকগুণ ভাড়া আদায় করছে। এর ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন জরুরি কাজে বিদেশগামী যাত্রীরা।

উদাহরণস্বরূপ, ঢাকা থেকে সৌদি আরব রুটে আগে যেখানে টিকিটের দাম ছিল ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা, সেখানে এখন এ রুটে ১ লাখ ৭০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকার নিচে টিকিট মিলছে না। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ওমরা যাত্রীরা। একইভাবে দুর্ভোগে পড়ছেন বিদেশে চিকিৎসাপ্রার্থীরাও।

এভিয়েশন খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হঠাৎ করে টিকিটের দাম বেড়ে যাওয়ার নেপথ্যে রয়েছে কারসাজি। এর জন্য উচ্চ ভ্রমণ কর, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং চার্জ, ল্যান্ডিং ও পার্কিং চার্জ বৃদ্ধি ও ডলার সংকটের পাশাপাশি বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের জারি করা একটি পরিপত্রকে দায়ী করছেন তারা।

এ পরিপত্রে বলা হয়েছে, এখন থেকে কোনো বিমান সংস্থা তিন দিন বা ৭২ ঘণ্টার বেশি কোনো টিকিটের বুকিং রাখতে পারবে না। টিকিটের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি রোধে এ নির্দেশনা জারি করা হলেও বিমান সংস্থাগুলোর অভিযোগ-পরিকল্পিতভাবে এই পরিপত্র জারি করে আকাশপথে ভাড়া নিয়ে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। তাদের মতে, ডলার সংকটে টিকিট বিক্রির ২ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ আটকে আছে দেশের ব্যাংকগুলোতে। বিদেশি বিমান সংস্থাগুলো এই অর্থের ‘কস্ট্ অব ফান্ড’ সমন্বয়ে টিকিটের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।

এ পরিপত্রের পর দেশের ট্রাভেল এজেন্টরা এখন গ্রুপ টিকিটের জন্য বিদেশি ট্রাভেল এজেন্সির দ্বারস্থ হচ্ছে। এতে পুরো টাকা হুন্ডির মাধ্যমে চলে যাচ্ছে বিদেশে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি অব্যাহত থাকলে আকাশপথের ৪০ হাজার কোটি টাকার টিকিট ব্যবসার পুরোটাই বিদেশে পাচারের আশঙ্কা রয়েছে। অর্থাৎ সরকারের ওই সিদ্ধান্তের ফলে যাত্রীরাই কেবল দুর্ভোগে পড়েনি, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেও এর বিরূপ প্রভাব পড়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। কাজেই এ পরিপত্র বাতিল বা সংশোধন করা উচিত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

জানা যায়, আশপাশের কোনো দেশে এভাবে উড়োজাহাজের ভাড়া বাড়েনি। ভাড়া বেড়েছে শুধু বাংলাদেশ থেকে বিদেশগামী যাত্রীদের। এর ফলে চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে যাত্রীস্বার্থ। তাই এদিকে দৃষ্টি দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মনে করি আমরা। আপাতদৃষ্টিতে যেসব কারণে আকাশপথে টিকিটের দাম বাড়ছে যেমন-আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে না পারা, উচ্চ ল্যান্ডিং, পার্কিং ও নিরাপত্তা চার্জ, উচ্চ গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং চার্জ-এসব দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। বস্তুত আকাশপথে ভাড়া নিয়ে বাস্তবে কী ঘটছে, কাদের কারণে সৃষ্টি হয়েছে এ নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি-আমরা মনে করি অবিলম্বে এসবের তদন্ত হওয়া উচিত।

একটি স্বাধীন দেশের নাগরিকরা জরুরি প্রয়োজনেও ভাড়া নৈরাজ্যের কারণে বিদেশ যেতে পারবেন না বা টিকিট সংগ্রহে দুর্ভোগের শিকার হবেন, এটা মেনে নেওয়া যায় না। বস্তুত টিকিটের দাম নির্ধারণ ও বুকিং পদ্ধতিতে আরও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকা দরকার। এক্ষেত্রে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করাও জরুরি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম