‘নগদ’-এর বড় জালিয়াতি
জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনুন

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

সম্প্রতি বাংলাদেশ ডাক বিভাগের মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’-এর ভয়াবহ ডিজিটাল জালিয়াতির তথ্য উঠে এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদনে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় নগদ কর্তৃপক্ষ দুর্নীতি করেছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক। একটি চক্র নানাভাবে লোপাট করেছে বিপুল পরিমাণ অর্থ।
জানা যায়, এ জালিয়াতিতে নগদকে প্রত্যক্ষভাবে উৎসাহিত করেছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার পুত্র তৎকালীন তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় সরাসরি এর সুবিধা ভোগ করেছেন। ডাক অধিদপ্তর ও থার্ড ওয়েভ টেকনোলজির চুক্তি অনুযায়ী, নগদের ব্যাংক হিসাবে যত টাকা জমা থাকবে, ঠিক সমপরিমাণ ই-মানি ইস্যু করা যাবে। এর বেশি ই-মানি ইস্যু করা যাবে না। কিন্তু নগদ অ্যাকাউন্টে থাকা টাকার চেয়ে ৬৪৫ কোটি টাকার বেশি ই-মানি ইস্যু করা হয়েছে।
অনুমোদন ছাড়াই নগদে ৪১টি পরিবেশকের হিসাব খোলার মাধ্যমে ১ হাজার ৭১১ কোটি টাকা বের করে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এসব পরিবেশকের দায়িত্ব ছিল সরকারি ভাতা বিতরণ করা। কিন্তু তারা ভাতা বিতরণ করেননি। ভাতার টাকা পরিবেশকদের হিসাব ব্যবহারের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে। নগদে যখন অনিয়ম সংঘটিত হয়, সে সময় এর পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আওয়ামী লীগের একাধিক প্রভাবশালী নেতা। বস্তুত তৎকালীন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতাতেই নগদ অনিয়ম করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে নীরবে তা দেখেছে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ডাক বিভাগের পক্ষে নগদ নামে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালুর অনুমতি চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করা হয়। শর্ত মেনে আবেদন না করায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুমোদন দেয়নি। তখন ডাক অধিদপ্তর নিজেদের আইনে পরিবর্তন এনে ২০১৯ সালের ২৬ মার্চ নগদ নামে মোবাইলে ব্যাংকিং সেবা চালু করে।
নিয়ম অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া কোনো ব্যাংকিং কার্যক্রম চালুর সুযোগ নেই। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র জয় নগদকে লাইসেন্স দেওয়ার জন্য সাবেক গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে টেলিফোনে সরাসরি কথা বলেছিলেন।
এরপর শর্ত পূরণ না করলেও ২০২০ সালে নগদকে সাময়িকভাবে অনুমোদন দিয়ে ডাক বিভাগকে চিঠি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বস্তুত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফজলে কবির ও আব্দুর রউফ তালুকদার সে সময় এ বিষয়ে কী ভূমিকা পালন করেছেন এটা এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এসব জালিয়াতির ঘটনায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যারা জড়িত, তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা দরকার।