বিদ্যুৎ খাতে সীমাহীন লুটপাট
অভিযুক্তরা অধরা কেন?

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ফাইল ছবি
২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ ও এই দলের নেত্রী শেখ হাসিনা ফ্যাসিবাদী চরিত্র ধারণ করা শুরু করেন। শুরুর দিকেই তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে শহিদ মইনুল হক সড়কে অবস্থিত তার বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয় এবং বাড়িটি ভেঙেও ফেলা হয়। এ ছিল প্রতিশোধপরায়ণতার এক নিকৃষ্ট উদাহরণ। বাড়িটি ভেঙে ফেলার নেপথ্যে ছিলেন ইউনাইটেড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের এক নিকটাত্মীয়। এই ব্যক্তি ওই সময় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করে ছিলেন। তারই নিরবচ্ছিন্ন মোসাহেবির প্রতিদান হিসাবে সরকার ইউনাইটেড গ্রুপকে সীমাহীন অবৈধ সুযোগ-সুবিধা দিতে থাকে। বলা যায়, গত সাড়ে ১৫ বছরে গ্রুপটি ফুলে-ফেঁপে আঙুল থেকে কলাগাছে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ খাত থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছে গ্রুপটি। এই হরিলুটে সরাসরি সহযোগিতা করেছেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। এই বিপুকেও আবার ঘুস হিসাবে নামমাত্র মূল্যে দেওয়া হয়েছে রাজধানীর ১০০ ফুট সড়কের পাশে অবস্থিত ৮০ কাঠা জমি, যার বর্তমান মূল্য দেড়শ কোটি টাকার বেশি।
অবাক তথ্যই বটে, বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস বসিয়ে রেখে শুধু ক্যাপাসিটি চার্জের নামে লুটে নেওয়া হয়েছে ৭ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ খাতে এই লুটপাটের অঙ্ক দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। আরও ভয়ংকর তথ্য হলো, শেখ হাসিনা ও তার দুই সহযোগী প্রভাবশালীর আনুকূল্যে বিদ্যুৎ দেওয়ার নামে পাওয়ার প্ল্যান্ট বানিয়ে সেই বিদ্যুতের বড় অংশ চড়া দামে পিডিবির কাছে বিক্রি করে সাধারণ গ্রাহকের পকেট কাটা হয়েছে।
গত সরকার আমলে ইউনাইটেড গ্রুপের বিদ্যুৎ খাতে লুটপাটকে অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। একটি ফ্যাসিবাদী সরকারের তোষামোদকারী হয়ে কোনো একটি গ্রুপ সীমাহীন লুটপাট করবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না। সবচেয়ে বড় কথা, গ্রুপটির লুটপাটের কারণে দেশের সাধারণ মানুষও আর্থিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উল্লেখ করা যায়, বিদ্যুৎ খাতের লুটপাট যেন ভবিষ্যতে প্রশ্নের সম্মুখীন না হয়, সে লক্ষ্যে এ খাতে গত সরকারের যাবতীয় কর্মকাণ্ডকে ইনডেমনিটি দেওয়া হয়েছিল। এই ইনডেমনিটি যে অসৎ উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়েছিল, তা বোধগম্য। আমাদের কথা হলো, গত সরকার আমলের ইউনাইটেড গ্রুপের সব আর্থিক অপকর্মের সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে এবং দোষীদের আনতে হবে আইনের আওতায়। সরকার পরিবর্তনের পর কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান রং বদলিয়ে আবারও অপকর্মে লিপ্ত হবে, তা হতে দেওয়া যায় না। আমরা একটি দুর্নীতিমুক্ত, জবাবদিহিমূলক সমাজ চাই। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে যেখানে যতটুকু করা দরকার, ততটুকু করতে হবে। সরকারের চলমান সংস্কার প্রক্রিয়ার সমান্তরালে প্রয়োজনীয় কাজগুলো সম্পন্ন করা জরুরি।