Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ড

জাতিসংঘ রিপোর্ট বিচারের দাবি জোরালো করেছে

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ড

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচার হত্যাকাণ্ড সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই যে সংঘটিত হয়েছে, এ তথ্য উঠে এসেছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং রিপোর্টে। জাতিসংঘের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ওই ঘটনায় নির্বিচার গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয় ১৪০০ নিরস্ত্র মানুষকে।

এর মধ্যে রয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থী, নিরস্ত্র বিক্ষোভকারী, নারী ও শিশু। হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে ১১৮ শিশু। আহত হয়েছেন প্রায় ১২ হাজার মানুষ। হত্যাকাণ্ডের ৬৬ শতাংশই মিলিটারি রাইফেলের গুলিতে এবং ১২ শতাংশ শটগানের গুলিতে সংঘটিত হয়। প্রমাণ মিলেছে, ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে এই নৃশংসতার পথ বেছে নিয়ে নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করার নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। আর পুরো বিষয়টি সমন্বয় করেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

সামরিক ও আধা-সামরিক কর্মকর্তাদের পাশাপাশি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও। এমনকি তারা হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসায়ও বাধা দিয়েছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, এটি ক্ষমতার চূড়ান্ত অপব্যবহার ও মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন, আন্তর্জাতিক ফৌজদারি অপরাধ হিসাবে যার বিচার হওয়া জরুরি। বস্তুত জাতিসংঘের এ রিপোর্টের মধ্য দিয়ে ওই ভয়াবহ ঘটনার তথ্য বিশ্বের কাছে উন্মোচিত হলো।

নতুন মাত্রা পেল জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত নির্বিচার হত্যাকাণ্ড এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার সুষ্ঠু ও ন্যায়বিচারের প্রশ্নটি। এছাড়া এ প্রতিবেদনকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দলিল হিসাবেও ব্যবহার করা যাবে।

আমরা জানি, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার ওপর সংঘটিত গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনাসহ গুরুত্বপূর্ণ অপরাধীরা এখনো পলাতক বা দেশের বাইরে।

এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক বলেছেন, এক্ষেত্রে অপরাধীরা দেশের বাইরে থাকলে তাদের ফেরানোর বিষয়ে সর্বজনীন এখতিয়ার (ইউনিভার্সাল জুরিসডিকশন) প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে যে দেশে অপরাধী অবস্থান করছে, তাদের গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অপরাধের বিচার করতে সম্মত হতে হবে। এছাড়া বাংলাদেশ এ বিষয়ে তদন্তের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে বলতে পারে।

আমরা মনে করি, দেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের স্বার্থে বিগত সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব ও আওয়ামী লীগ, সহযোগী সংগঠন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থার যারাই হত্যাকাণ্ডসহ গুরুতর অপরাধের সঙ্গে জড়িত, তাদের সবাইকে বিচারের মুখোমুখি করা প্রয়োজন। জাতিসংঘের এ প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচার ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের বিষয়টির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মিলেছে।

জোরালো হয়েছে অপরাধীদের বিচারের দাবি। এখন প্রয়োজন এ প্রতিবেদনের আলোকে বিশ্বব্যাপী জনমত গঠন এবং প্রত্যর্পণ চুক্তির মাধ্যমে শেখ হাসিনাসহ অপরাধীদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার নিশ্চিত করা। ছাত্র-জনতার জুলাই আন্দোলনে নির্বিচার হত্যার ঘটনায় নির্দেশদাতা ও নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তিদের বিদ্যমান আইন ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের আলোকে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাসহ ৪১টি সুপারিশ করেছে জাতিসংঘ। এসব সুপারিশ আমলে নিয়ে অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে সরকার, এটাই কাম্য।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম