বেবিচকে মহাদুর্নীতি
অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনা জরুরি

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

বিগত সরকারের আমলে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) আওতাধীন দেশের বিমানবন্দরগুলোর উন্নয়নের নামে লুটপাটের মহোৎসব চলেছে। এর প্রভাব এখনো বিদ্যমান। থার্ড টার্মিনালসহ দেশের আট বিমানবন্দরে ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার প্রকল্পে দুর্নীতির তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
ইতোমধ্যে ৯০০ কোটি টাকার দুর্নীতি নিয়ে মামলা হয়েছে এবং আরও মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে। মামলায় আসামিদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক বিমান সচিব মহিবুল হক, যুগ্মসচিব জনেন্দ্রনাথ সরকার, বেবিচকের সাবেক চেয়ারম্যান মফিদুর রহমান, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল মালেক এবং বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান।
আসামিদের তালিকা দেখেই বোঝা যায় প্রতিষ্ঠানটিতে দুর্নীতি হয়েছে কোন পর্যায়ে, অর্থাৎ মাথায়। আসামিদের মধ্যে তারিক আহমেদ সিদ্দিক পলাতক। মহিবুল হককে গ্রেফতার করা হয়েছে। জনেন্দ্রনাথ সরকারকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে। আব্দুল মালেকও অবসরে গেছেন। তবে এখনো বহাল তবিয়তে আছেন প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান। অথচ অভিযোগ আছে, বিগত সরকারের আমলে তার নেতৃত্বে শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। দুদকের অনুসন্ধানে বেবিচকের লুটপাটের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণও মিলেছে। প্রশ্ন হলো, এরপরও তিনি কীভাবে বহাল তবিয়তে থাকেন?
বিমানবন্দরের উন্নয়নের নামে বেবিচকে দুর্নীতির ঘটনা নতুন নয়। এর আগে ২০১৯ সালে দুর্নীতির অভিযোগে শাহজালাল, শাহ আমানত, সিলেট ওসমানী ও কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৫ প্রকল্পের ফাইল তলব করেছিল দুদক। একই সঙ্গে এসব প্রকল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানসহ ৯ কর্মকর্তার ব্যক্তিগত নথিও তলব করা হয়। তখনো হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ঘুস বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছিল। প্রশ্ন হলো-যার বিরুদ্ধে এত দুর্নীতির অভিযোগ, তাকে পদোন্নতি দিয়ে প্রধান প্রকৌশলী করা হয়েছে কীভাবে? টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামনও এমন প্রশ্ন তুলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, যারা তাকে পদোন্নতি দিয়েছেন, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত।
এবার যে অভিযোগগুলো উঠেছে তার কয়েকটি হলো-কাজ না করেই একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নামে ১৩৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া; সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উন্নয়ন ও টার্মিনাল ভবন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরুর আগেই ঠিকাদারকে ২১২ কোটি টাকার বিল দেওয়া; থার্ড টার্মিনালের নকশা পরিবর্তনের ফলে সাশ্রয় হওয়া ১২০০ কোটি টাকার কোনো হদিস না থাকা। এসব অভিযোগ নিঃসন্দেহে গুরুতর। এমনিতেই এ প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি এক সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। নতুন অভিযোগগুলো এ সংস্থাকে আরও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে, সন্দেহ নেই।
আমাদের কথা হলো, বেবিচকে দুর্নীতির বিষয়ে দুদকের তদন্ত অব্যাহত রাখতে হবে। শুধু তাই নয়, তদন্তে যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে নিতে হবে আইনগত ব্যবস্থা। বস্তুত বেবিচকের ভাবমূর্তি ইতোমধ্যে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সংস্থার ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করতে হলে এর অভ্যন্তরে সংঘটিত সব ধরনের দুর্নীতির মূলোৎপাটন করা দরকার।