Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

রাজউকের প্লট বরাদ্দে নৈরাজ্য

দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা কাম্য

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

রাজউকের প্লট বরাদ্দে নৈরাজ্য

ছবি: সংগৃহীত

বিগত সরকারের সময় রাজউকের প্লট বরাদ্দপ্রাপ্তদের মধ্যে শুধু মন্ত্রী, এমপি ও আওয়ামী আদর্শের রাজনীতিকই নন, বিশেষ কোটায় তালিকায় আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গাড়িচালক, এমনকি আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের অফিস সহকারী তথা পিওনও। শনিবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-এছাড়া বিশেষ আস্থাভাজন বিবেচনায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ব্যক্তিকে ইচ্ছামতো প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে রাষ্ট্রীয় বিশেষ অবদানের কোটায় প্লট দেওয়া হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রাধান্য পায় ‘রাজনৈতিক আনুগত্যের বিবেচনা’। সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জানা যায়, বিগত সরকারের আমলে রাজউকের অ্যালটমেন্ট অব ল্যান্ডস রুলসের ১৩/এ উপবিধির (অসামান্য অবদান) অধীনে এসব প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। এতে বলা হয়-মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ-সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, সমাজকর্মী, সরকারি চাকরিজীবী এবং রাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা ব্যক্তিরা অসামান্য অবদান কোটায় প্লটের আবেদন করতে পারবেন। এছাড়া রাষ্ট্র বা সরকার যদি কাউকে বিশেষ অবদান রেখেছেন বলে নির্বাচন করে, তাহলে তিনি প্লট পাবেন।

জানা যায়, ১৯৬৯ সাল থেকে বৈষম্যমূলক হিসাবে বিবেচিত এই ১৩ ধারা বিদ্যমান ছিল। ১৯৮৬ সালে এক দফা সংশোধনের পর এটি ১৩/এ ধারা এবং সর্বশেষ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার সংশোধিত গেজেটে ১৩এ (১) এ, বি, সি বিধি প্রণয়ন করে। এর আগে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলেও রাজনৈতিক বিবেচনায় বহু প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। বর্তমান সরকার এর সবই তদন্তের আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে। ইতঃপূর্বে এমন প্রক্রিয়ায় বরাদ্দ দেওয়া রাজউকের আবাসন প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে গুলশান, বনানী, বারিধারা ও বাড্ডা।

বোঝাই যাচ্ছে, সব সরকারের আমলেই রাষ্ট্রের জন্য অসামান্য অবদান রাখার বিশেষ কোটায় প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ সুবিধার জন্য ধারাও সংশোধন করা হয়েছে। পরিতাপের বিষয়, একটি গণতান্ত্রিক দেশে সরকার যে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে, ক্ষমতায় যারা আসেন, তারা তা মনে রাখতে পারেন না। নানা সুযোগ-সুবিধা নিতে গিয়ে রাজধানীর একখণ্ড জমিকেও তারা ছেড়ে দিতে চান না। নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করে ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ফ্রিস্টাইলে যাকে খুশি তাকে প্লট দেওয়ার যে রেওয়াজ তৈরি করেছিল বিগত সরকার, তা যেন পরবর্তী সময়ে অনুসরণ করা না যায়, সে ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ এখনই নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি আমরা। একইসঙ্গে যারা বিগত সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্লট বাগিয়ে নিয়েছেন, তাদের নাম তালিকাভুক্ত করে আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়াও জরুরি। পাশাপাশি এসব প্লটের যারা প্রকৃত দাবিদার, তাদের যাচাই-বাছাই করে দেওয়ার পথও তৈরি করা প্রয়োজন।

আশার কথা, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতাগ্রহণের পর রাজউকের আলোচিত পূর্বাচল, উত্তরা ও ঝিলমিল প্রকল্পে বিপুলসংখ্যক প্লট বরাদ্দপ্রাপ্তদের তালিকা হালনাগাদের কাজ শুরু করেছে। এক্ষেত্রে শুধু খেয়াল রাখতে হবে, ঢালাও বাতিল করতে গিয়ে যারা প্রকৃতই দাবিদার এবং নিয়ম মেনে প্লট পেয়েছেন, তাদের প্রতি যেন কোনো প্রকার অবিচার করা না হয়। এ হালনাগাদের কাজ সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই করা হবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম