রেলের স্টাফদের কর্মবিরতি
দাবি আদায়ে যাত্রীদের জিম্মি করা কাম্য নয়

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
-67995b652c11f.jpg)
ছবি: যুগান্তর
রেলওয়ের রানিং স্টাফদের কর্মবিরতির কারণে সারা দেশে রেলযোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ট্রেনযাত্রীরা। দেশের বিভিন্ন রেলস্টেশনে আসা যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছাতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কর্মবিরতি প্রসঙ্গে রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদের প্রধান সমন্বয়কারী যুগান্তরকে বলেছেন, ‘আমরা পদে পদে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’ জানা যায়, ২০২২ সালের ১৩ এপ্রিল তারা কর্মবিরতি পালন করেছিলেন। পরে রেল কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছিল। এ সমস্যার সমাধানে সোমবার ঢাকার কমলাপুরে রানিং স্টাফদের সঙ্গে বৈঠক করেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা। বৈঠকে কোনো সমাধান আসেনি। সারা দেশে ট্রেন চালুর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের নেতাদের নিয়ে মঙ্গলবারও দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে; কিন্তু এ সম্পাদকীয় লেখার সময় পর্যন্ত কোনো সমঝোতা হয়নি।
উল্লেখ্য, রানিং স্টাফদের দিনে ৮ ঘণ্টার জায়গায় গড়ে ১৫-১৬ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করতে হয়। সেজন্য তাদের আগে দেওয়া হতো বিশেষ আর্থিক সুবিধা, যাকে রেলওয়ের ভাষায় বলা হয় মাইলেজ। প্রতি ১০০ কিলোমিটার ট্রেন চালালে রানিং স্টাফরা মূল বেতনের একদিনের বেসিকের সমপরিমাণ টাকা অতিরিক্ত পেতেন। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে রানিং স্টাফদের কিছু সুবিধা বাতিল করে দেওয়া হয়। এরপর থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদ ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করে আসছে।
কর্মবিরতির কারণে রেলের যাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘবে সড়কপথের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি রুটে বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে বিআরটিসি বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে। ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন এবং বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, কুমিল্লা, বগুড়া ও ময়মনসিংহগামী যাত্রীরা তাদের ক্রয়কৃত রেল টিকিট ব্যবহার করেই বিআরটিসি বাসে ভ্রমণ করতে পারবেন। একইভাবে এসব স্থান থেকে ঢাকায় যাতায়াতের জন্যও এই বাস সার্ভিস ব্যবহার করা যাবে।
যাত্রীদের জিম্মি করে রেলওয়ের রানিং স্টাফদের কর্মবিরতি কর্মসূচিকে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেছেন, এতে সাধারণ মানুষই বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। তিনি আরও বলেছেন, ‘স্টাফদের দাবির বিষয়ে আমাদের আলোচনার দরজা সবসময় খোলা আছে। প্রয়োজনে আমরা তাদের সঙ্গে আবার আলোচনা করব এবং অর্থ বিভাগেও তাদের এ দাবি নিয়ে আলোচনা করব।’ স্টাফদের মাইলেজ অ্যালাউন্সের দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাদের এ দাবির অনেক অংশ আমরা ইতোমধ্যে পূরণ করেছি। বাকি দাবিগুলো নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত আছি আমরা।
এদিকে মঙ্গলবার অর্থনৈতিক ও ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, রেলের কর্মচারীদের যে যৌক্তিক দাবি, তা যতটুকু পূরণ করা সম্ভব তা করেছি। ওভারটাইম ইস্যুর সমাধান করা হয়েছে। এর বাইরের যেসব দাবি, তা পূরণ করা সম্ভব নয়। বস্তুত কেবল রেলের স্টাফরাই নন, আরও অনেক পেশাজীবীকেই সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন দাবিতে রাজপথে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। আমরা মনে করি, গত ১৫ বছরের পুঞ্জীভূত সমস্যার সমাধানে সরকারকে সময় দিতে হবে। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিবেচনায় নিতে হবে এবং দাবি পূরণের ক্ষেত্রে ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে।