শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ : আলোচনাই সমাধানের সর্বোত্তম পথ
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বিভিন্ন দাবিতে কথায় কথায় রাজপথ অবরোধ, সংঘাত-সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ রাজধানীতে যেন স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোববার রাতেও আমরা দেখলাম বিভিন্ন দাবিতে নিউ মার্কেট এলাকায় সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধে এবং পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়তে। সোমবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, দুই পক্ষের কয়েক ঘণ্টাব্যাপী পালটাপালটি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপে নীলক্ষেত ও নিউ মার্কেট এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে চার প্লাটুন বিজিবিও মোতায়েন করা হয়। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১০ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।
জানা যায়, সন্ধ্যা ৬টার দিকে সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ করেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, রোববার বিকালে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ৫ দফা দাবির অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি তাদের সঙ্গে অসদাচরণ করেন। এর জেরে শিক্ষার্থীরা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ করে ওই উপ-উপাচার্যের ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে জানায়। ঢাবি উপ-উপাচার্যের (শিক্ষা) বাসভবন ঘেরাওয়ের ঘোষণা দিয়ে মিছিল নিয়ে ঢাকা কলেজসহ সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেতসংলগ্ন মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ গেটের দিকে এলে রাত পৌনে ১২টার দিকে ঢাবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাঁধে। এ সময় পুলিশ মাঝখানে শক্ত অবস্থানে থেকে দুপক্ষকেই শান্ত করার চেষ্টা করে।
বস্তুত দাবি-দাওয়া আদায়ের কৌশল হিসাবে কোনো পক্ষেরই রাস্তা অবরোধ, সংঘর্ষ-ভাঙচুরের মতো কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে রাজধানীবাসীকে জিম্মি করা গ্রহণযোগ্য নয়। যারা দাবি আদায়ের পথ হিসাবে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে, সর্বাগ্রে তাদের জনগণের কথা মাথায় রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, কোনো দাবি-দাওয়া আদায়কে কেন্দ্র করে রাস্তা অবরোধ, বিক্ষোভ, ভাঙচুরে জনদুর্ভোগ তৈরি হলে তা জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। আমরা মনে করি, ন্যায্য দাবি-দাওয়া আদায়ের মাধ্যম হিসাবে আলোচনাকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাও পরিষ্কার জানিয়েছেন সব দাবি-দাওয়ার বিষয়ে লিখিতভাবে জানাতে। এতে অন্তত জনসাধারণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ছন্দপতন ঘটবে না, নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে না।
ভুলে গেলে চলবে না, অবরোধ-ভাঙচুর কিংবা জ্বালাও-পোড়াওসহ ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড কখনোই দাবি আদায়ের মাধ্যম হতে পারে না। দেশের ছাত্রসমাজ, যারা দেশ গড়ার কাজের সহযোগী ও অংশীদারও বটে, তাদের ধৈর্যসহকারে যৌক্তিক উপায়ে নিজেদের দাবি ব্যক্ত করা উচিত। নগরজীবনের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড যাতে ব্যাহত না হয়, সেদিকে সবারই দৃষ্টি রাখতে হবে। ছাত্র বিক্ষোভের সুযোগ নিয়ে কেউ যেন দেশবিরোধী অপতৎপরতায় লিপ্ত হতে না পারে, শান্তি-শৃঙ্খলার স্বার্থে সে বিষয়ে সবারই সচেতন থাকা প্রয়োজন। অন্যথায়, ষড়যন্ত্রকারীরা এ থেকে ফায়দা লুটতে পারে। দায়-দাবি আদায়ের বিষয়ে সব পক্ষ সংযমের পরিচয় দিয়ে আলোচনার টেবিলকেই বেছে নেবে, এটাই প্রত্যাশা।