সুদহার ও খেলাপি ঋণ : ব্যবসায়ীদের প্রস্তাব আমলযোগ্য
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ব্যাংক ঋণের সুদহার ও খেলাপি ঋণ দীর্ঘদিনের আলোচনার বিষয়। একদিকে ব্যাংক ঋণের সুদহার কমানোর দাবি রয়েছে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের, অন্যদিকে খেলাপি ঋণ আদায় প্রক্রিয়া সুফল দিচ্ছে না। এ দুই বিষয়ের গ্রহণযোগ্য নিষ্পত্তি হওয়া দরকার। সম্প্রতি দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরা ব্যাংক ঋণের সুদহার পর্যায়ক্রমে কমিয়ে সিঙ্গেল ডিজিটে নিয়ে আসার সুপারিশ করেছেন। তারা বলছেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে ঋণের সুদহার বাড়ানো যাবে না। একইসঙ্গে অনিচ্ছাকৃত খেলাপিদের ঋণ নবায়নের ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় দিয়ে নীতিমালা প্রণয়ন করারও প্রস্তাব করেছেন তারা। তারা আরও বলছেন, খেলাপি ঋণের বিদ্যমান সংজ্ঞা আরও শিথিল করতে হবে এবং ডলারের জোগান স্বাভাবিক ও এর দাম স্থিতিশীল রাখতে হবে। বড় অঙ্কের খেলাপি ঋণ ১ শতাংশ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ঋণ ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে নবায়ন এবং এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১২ বছরে পরিশোধের সুযোগ দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। এছাড়া সংকট ও বিনিময় হারের কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের ঋণ পরিশোধে বিশেষ সুবিধা এবং একক গ্রাহকের ঋণসীমা বৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
এ কথা অনস্বীকার্য যে, দেশের ব্যাংক খাত যৌক্তিক ও ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের কাছে গ্রহণযোগ্য রীতিতে চলছে না। আবার অসাধু ব্যবসায়ীদের নিয়মভঙ্গ করার প্রবণতাও লক্ষণীয়। খেলাপি ঋণ এখন আমাদের অর্থনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। গত সরকারের আমলে এ প্রবণতা চরম আকার ধারণ করেছিল। অন্যদিকে ব্যাংক ঋণের বর্তমান যে সুদহার, তা ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের জন্য এক বাড়তি চাপ হিসাবে প্রতীয়মান হচ্ছে। বর্তমান সুদহার পরিশোধ করে ব্যবসা চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে অনেকের কাছে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা এক ধরনের নিরুৎসাহিতবোধ করছেন। এই নিরুৎসাহের সঙ্গে যদি বেশি সুদহার যুক্ত হয়, তাহলে ব্যবসাক্ষেত্রে মন্দা দেখা দেবে সন্দেহ নেই। সুতরাং আমরাও মনে করি, ব্যাংক ঋণের সুদহার কমানো দরকার এবং সেটা হওয়া উচিত সিঙ্গেল ডিজিট। সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিট হলে বিনিয়োগকারীরা আরও আগ্রহী হবেন বলা যায়। দ্বিতীয়ত, খেলাপি ঋণ আদায়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার পাশাপাশি অনিচ্ছাকৃত ঋণ পরিশোধের নিয়মকে শিথিল করার যে প্রস্তাব করা হয়েছে, সেটাও ভেবে দেখা যেতে পারে। ব্যাংক খাতের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত খেলাপি ঋণ আদায় করা। এই আদায়ে কোন কৌশল অবলম্বন ফলপ্রসূ হবে, তা উদ্ভাবন করতে হব। শেষ কথা, ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। বিগত সরকারের ধারাবাহিকতা কোনোক্রমেই কাম্য নয়।