ঢাকায় অবিশ্বাস্য বায়ুদূষণ
কারণগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বায়ুদূষণে আমাদের প্রাণপ্রিয় শহর ঢাকার যে অবস্থা, তাতে এ শহরের বাসিন্দা হওয়ার গৌরব অনেকটাই ম্লান হয়ে যায়। চলতি জানুয়ারি মাসে বেশ কয়েকবার বায়ুদূষণে প্রথম স্থানে ছিল ঢাকা। গত শুক্রবারও প্রথম অবস্থানে ছিল। ২০২৩ সালের ২১ থেকে ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত টানা ৫ দিন বিশ্বের শীর্ষ দূষিত শহরের তালিকায় স্থান করে নেয় ঢাকা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত ৩০ বছর ধরে রাজধানীর বায়ুদূষণের মাত্রা বাড়ছে লাফিয়ে। সার্বিকভাবে ঢাকার বাতাসে সহনীয় মাত্রার চেয়ে প্রায় ৫-৭ গুণ বেশি হচ্ছে দূষণ। বড় খবর হলো, এ দূষণের কারণে বছরে ৬০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। মারা যাচ্ছে অন্তত ১ লাখ মানুষ।
এই যখন বাস্তবতা, তখন বায়ুদূষণ আমরা কীভাবে রোধ করব, তা নিয়ে কোনো পরিকল্পনা দেখা যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে এ ব্যাপারে নির্বিকার দেখা যাচ্ছে। বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করে ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া হলে জনস্বাস্থ্য মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে, সন্দেহ নেই। পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, ঢাকার সবুজায়ন কমছে, বাড়ছে বায়ুদূষণ সৃষ্টি হওয়ার যাবতীয় উৎস। দুটি ক্ষেত্রে বায়ুদূষণ হয় সবচেয়ে বেশি। প্রথমত, গাড়ির ইঞ্জিন, বিভিন্ন কল-কারখানার জ্বালানি তেল পোড়ানোর ফলে হয় দূষণ। দ্বিতীয়ত, কাঠ-লাকড়ি, গার্মেন্ট পণ্যসহ বিভিন্ন বর্জ্য পোড়ানোর ফলেও বায়ুদূষণ হয়। কৃষিকাজেও তেল পুড়ছে, তবে রাজধানীতে এই তেল পোড়ার তেমন প্রভাব নেই। ঢাকায় গত কয়েক বছর ধরে বাতাসে ২৭৬ থেকে ২৮০ মাইক্রোগ্রাম দূষণ হচ্ছে। সাধারণত প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ৬৫ মাইক্রোগ্রাম ধূলিকণা ও গ্যাসীয় পদার্থকে সহনীয় মাত্রা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ওদিকে বস্তুতকণা ২.৫ নামের অতি সূক্ষ্ম পদার্থ স্বাভাবিকের চেয়ে ৫০০ গুণ ঢাকার বাতাসে ভেসে বেড়ায়।
বায়ুদূষণ যেহেতু ক্যানসারেরও কারণ ঘটাতে পারে, তাই এটা রোধে সরকারকে দ্রুত তৎপর হতে হবে। তথ্যে উঠে এসেছে, রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোড, নিউমার্কেট ও তেজগাঁও শিল্প এলাকায় দূষণ হয় সবচেয়ে বেশি। আর দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে গাজীপুরে বায়ুদূষণ সর্বোচ্চ মাত্রায় হয়ে থাকে। সুতরাং বেশি দূষিত এলাকাগুলো চিহ্নিত করে সেসব জায়গা বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে দূষণমুক্ত করতে হবে। মোটা অঙ্কের আর্থিক ক্ষতি ও মানুষের জীবন বাঁচাতে এর বিকল্প নেই।