Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন

সংকট মোকাবিলায় সময়োপযোগী পদক্ষেপ প্রয়োজন

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন

চলতি অর্থবছরে দেশের সার্বিক অর্থনীতি সংকটময় অবস্থায় রয়েছে, যা আগামীতে আরও বৃদ্ধির শঙ্কা রয়েছে। বিভিন্ন কারণে চলতি অর্থবছরে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বিনিয়োগ হয়নি; অর্থনৈতিক মন্দায় রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি হচ্ছে। এদিকে সামাজিক সুরক্ষায় সরকারি বিনিয়োগ কিছুটা কমেছে। গ্রামীণ অর্থনীতি দুর্বল হওয়ায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংকট বাড়ছে। এসব কারণে চলতি অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ১ শতাংশে নেমে আসতে পারে। শুক্রবার প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টাস জানুয়ারি ২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষ্যে সংস্থাটির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেছেন, যেহেতু বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতি সংকটময় অবস্থায় রয়েছে, সেহেতু সরকারের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া। বস্তুত করোনা মহামারি-পরবর্তী ধাক্কা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অভিঘাত আমাদের দেশের অর্থনীতিতেও পড়েছে। সেই পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো পুরোপুরি বের হয়ে আসতে পারেনি। বাংলাদেশ এসব সংকট মোকাবিলা করে সামনে এগোলেও সংকটের প্রভাবে জনজীবনে যেসব আঘাত লেগেছে, সেগুলোর পুরোপুরি উপশম এখনো হয়নি।

ব্যবসা-বাণিজ্য দ্রুতগতিতে না বাড়লে, কারখানায় উৎপাদন না বাড়লে মানুষের আয় বৃদ্ধির সুযোগ কমে যায়। দেশে তিন বছর ধরে মানুষের প্রকৃত আয় কমেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব অনুযায়ী, সর্বশেষ গত ডিসেম্বরে মানুষের আয় বেড়েছে ৮ শতাংশের কিছু বেশি। কিন্তু পণ্যের দাম বেড়েছে প্রায় ১১ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ অংশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতি কমিয়েছে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমেছে। বস্তুত গত কয়েক বছর ধরেই জ্বালানি সংকট, ডলার সংকটসহ বেশকিছু উপাদান শিল্প উৎপাদনে সরাসরি প্রভাব ফেলেছে। এসব সমস্যার সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা না হলে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বিনিয়োগ হবে কিনা সন্দেহ। বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে তৈরি পোশাকশিল্প। কিন্তু ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার দেশগুলোতে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ক্রেতাদের চাহিদা কমছে। এমন পরিস্থিতিতে নতুন বাজার খোঁজার পাশাপাশি পণ্যের বহুমুখীকরণেরও পদক্ষেপ নিতে হবে। এদিকে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমছে। শিল্পের উৎপাদনেও এর প্রভাব পড়ছে।

সংকট কাটাতে বাংলাদেশ সরকারের জন্য বেশ কয়েকটি সুপারিশ করা হয়েছে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে। এর মধ্যে রয়েছে, রাজস্ব আদায় ব্যবস্থায় ব্যাপক সংস্কার করে আয় বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া, রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনা, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি সঠিক খাতে কার্যকর করা, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া। কাজগুলো দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব হলে অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে বলে বিশ্বব্যাংক মনে করছে। কাজেই অর্থনীতিকে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় গতিশীল করতে দ্রুত সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। বর্তমানে দেশের অর্থনীতিতে বিরাজমান সংকট সমাধানে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নিতে হবে। ব্যাংক ও আর্থিক খাতে যাতে কোনো অনিয়ম না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়াতে হবে। বেশিসংখ্যক নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির বাধা জরুরি ভিত্তিতে দূর করার পদক্ষেপ নিতে হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম