হাজারীবাগে অগ্নিকাণ্ড
কর্তৃপক্ষের টনক নড়বে কবে?
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
নিমতলী থেকে শুরু করে চকবাজারের চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ডের ভয়াবহতার পরও সেখানকার অলিগলিতে রাসায়নিক গুদাম ও কারখানা থাকার বিষয়টি কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। গত শুক্রবারও রাজধানীর হাজারীবাগে ফিনিক্স লেদার কমপ্লেক্স ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা আমরা দেখলাম। যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-অগ্নিকাণ্ডে সাত তলা ভবনটির ৫, ৬ ও ৭ম তলার দক্ষিণ পাশের অন্তত দশটি কারখানা, গুদাম, খাবারের প্রতিষ্ঠান পুড়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিটের চেষ্টায় প্রায় ৫ ঘণ্টা পর আগুন পুরোপুরি নেভানো সম্ভব হয়। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ভবনটিতে বেশিরভাগই দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি আগুন নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থাও সেখানে ছিল না। ভবনটি অনেক পুরোনো ও অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে চিঠি দেওয়া হলেও নেওয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা।
পুরান ঢাকার অধিকাংশ অলিগলিতে সবার চোখের সামনেই রাসায়নিক গুদাম ও কারখানাগুলোর অবস্থান। কিন্তু অদৃশ্য কারণে কর্তৃপক্ষের নেই কোনো পদক্ষেপ। এছাড়া এ এলাকার ৭০ শতাংশ সড়কই অগ্নিনির্বাপণের গাড়ি চলাচলের অনুপযোগী। ফলে সেখানে দুর্ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশ করাই দুরূহ হয়ে পড়ে। একদিকে পানিসহ অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রপাতি আনা-নেওয়ায় সমস্যা, অন্যদিকে রাসায়নিক দ্রব্য। এ পরিস্থিতিতে আগুন নেভানোর কাজটি কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে জানমালের ক্ষয়ক্ষতির ভয়াবহতা দেখতে হয় আমাদের। উল্লেখ্য, বিগত সরকারের সময়ে একাধিক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন, পুরান ঢাকার সব কেমিক্যাল গোডাউন সরিয়ে নেওয়া এবং দাহ্য কেমিক্যাল আনা-নেওয়া বন্ধসহ সেখানে নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তোলার মতো নানা নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পরিতাপের বিষয়, এসব কেবল কাগজে-কলমেই রয়ে গেছে।
হাজারীবাগের সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা কর্তৃপক্ষের অবহেলার বিষয়টিকেই আবারও মনে করিয়ে দিয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এরপরও কি কর্তৃপক্ষের টনক নড়বে? ‘নিমতলী’ কিংবা ‘চুড়িহাট্টা’র মতো আর কোনো ট্র্যাজেডির মুখোমুখি হতে চাই না আমরা। কাজেই অনতিবিলম্বে পুরান ঢাকা থেকে সব রাসায়নিক গুদাম ও কারখানা সরিয়ে নিতে হবে। এজন্য সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। মেঘে মেঘে অনেক বেলা হয়েছে। আমরা আর কোনো অজুহাত বা আশ্বাসবাণী শুনতে চাই না। এখন যা দরকার তা হলো, কাজের মাধ্যমে প্রমাণ দেওয়া এবং এজন্য কাউকে না কাউকে সুনির্দিষ্টভাবে দায়িত্ব নিতে হবে। পুরান ঢাকার জনজীবন নিরাপদ রাখতে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।