ঋণের উচ্চ সুদহার
উদ্যোক্তাদের পরামর্শ বিবেচনায় নেওয়া হোক
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
দেশে বিনিয়োগ ও উৎপাদনের ওপর ঋণের উচ্চ সুদহার যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, তা অতীতে বহুবার দেখা গেছে। পরিতাপের বিষয়, তা সত্ত্বেও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয় না। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীরা দেশের শিল্প খাতকে বাঁচাতে ঋণের সুদহার কমানোর দাবি জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে এক বৈঠকে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) একটি প্রতিনিধিদল একইসঙ্গে ডলারের দাম স্থিতিশীল রাখা, ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনারও আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি গ্যাস ও বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং খেলাপি ঋণের আন্তর্জাতিক মানের সংজ্ঞা কার্যকর করার সিদ্ধান্ত পিছিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ঋণের সুদের হার বাড়ানোর ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের খরচ বেড়ে গেছে। এতে পণ্যের দামও বাড়ছে, ফলে বিক্রি কমে গেছে। এর মধ্যে ঋণের সুদহার আরও বৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছে। সুদের হার নতুন করে আর না বাড়িয়ে চলমান সুদের হার কমানোর দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। অন্যথায় বাড়তি খরচ দিয়ে শিল্প টিকিয়ে রাখাই কঠিন হবে বলে মত তাদের।
জবাবে গভর্নর জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ফীতির হার কমানোর ওপর বেশি জোর দিয়েছে। এ জন্য ঋণের সুদহার বাড়ানোয় মূল্যস্ফীতি ডিসেম্বরে কমেছে, যা আগামী দিনে আরও কমবে বলে আশাবাদী তিনি। জুনের মধ্যে এ হার কমে এলে তখন ঋণের সুদহার কমানো শুরু হবে জানিয়ে গভর্নর বলেছেন, মূল্যস্ফীতির হার না কমলে ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষেরই ভোগান্তি বাড়ছে। উল্লেখ্য, ঋণের সুদহার আগে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ ছিল, এখন যা বেড়ে সর্বোচ্চ ১৬ শতাংশে উঠেছে। যদিও মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি আশানুরূপ নয়। এ অবস্থায় ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহার ব্যবসার খরচ ক্রমাগতভাবে বাড়িয়ে দেশের অর্থনীতিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে বলে মত দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
আমরাও উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, ঋণের সুদহার যে হারে বাড়ছে, তা বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তাদের জন্য বাড়তি চাপ তৈরি করছে। এমনিতেই জ্বালানি সংকটসহ নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই ব্যবসায়ীরা টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। কিন্তু এভাবে সুদের হার বাড়তে থাকলে শিল্পায়ন বাধাগ্রস্ত হবে; বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কমবে। ফলে কাঙ্ক্ষিত কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে না। বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, ক্রমাগত সুদহার বাড়লে তা হবে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’র মতো। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে; উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হবে; রপ্তানি প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে দেশ। এমনিতেই এখন সেভাবে নতুন শিল্প গড়ে উঠছে না, তার ওপর সুদহারের এমন ঊর্ধ্বগতি দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের নিরুৎসাহিত করবে। আমরা মনে করি, কোনোভাবেই উচ্চ সুদ দিয়ে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকা যাবে না। তাই সুদের লাগাম এখনই টেনে ধরতে হবে। তা না হলে উৎপাদন, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান সর্বত্র এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। দেশের শিল্প খাত যাতে অন্যান্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে সক্ষম হয়, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়ে সরকারকে বরং সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির কথা বিবেচনায় নিয়েই ঋণের সুদহার নির্ধারণ করতে হবে। উদ্যোক্তা ও ভোক্তাদের কথা চিন্তা করে সরকার ঋণের সুদের হার কমানোর পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।