অবৈধ বালু উত্তোলন
অপরাধীদের বিরুদ্ধে জোরালো পদক্ষেপ নিন
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সারা দেশে নদীসহ বিভিন্ন স্থান থেকে বেপরোয়া বালু উত্তোলনের বিষয়টি প্রায়ই খবরের শিরোনাম হয়। অবৈধ বালু উত্তোলনের মাধ্যমে কিছু প্রভাবশালী লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নদ-নদী ও এর তীরবর্তী জনগণ। গতকাল যুগান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার যমুনা নদীর ‘ডেঞ্জার জোন’ থেকে নির্বিঘ্নে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে একটি প্রভাবশালী চক্র। সেখান থেকে প্রতিদিন প্রায় ২০ লাখ টাকা ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন ওই চক্রের সদস্যরা। মানিকগঞ্জ জেলার এক আওয়ামী লীগ নেতার অবৈধ দখলে ছিল এ বালুমহাল। গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে তিনি পলাতক। এরপর ওই নেতা গোপনে বালু উত্তোলনে ইজারাসংক্রান্ত চুক্তিপত্র সম্পাদন করেন প্রভাবশালী এক মহিলার সঙ্গে। এ অপকর্মে নেপথ্যে সহযোগিতা করছেন স্থানীয় আরও কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি।
জানা যায়, আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্ট নেতা শিবালয়ের তেওতা ইউনিয়নের অন্তর্গত দক্ষিণ তেওতা এলাকায় দাগ-খতিয়ান নির্ধারিত নদীতে বিলীন সাড়ে ৯ একর স্থান থেকে বালু উত্তোলনের ইজারা পেয়েছেন। অথচ তিনি ড্রেজার বসিয়ে বালু তুলছেন ঝুঁকিপূর্ণ আলোকদিয়া এলাকায়। ইজারার আওতাভুক্ত এলাকা থেকে এর অবস্থান অন্তত তিন কিলোমিটার দূরে। আলোকদিয়া এলাকার নদীর দুই তীরে বসানো হয়েছে ইস্ট-ওয়েস্ট ইন্টার কানেকশন-১ (ইডব্লিউআইসি-১) বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের সুউচ্চ দুটি টাওয়ার। বিদ্যুৎ সঞ্চলানের এ লাইনে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। অপরিকল্পিতভাবে বালি উত্তোলনের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে এ দুটি পিলার। যে কোনো সময় বিদ্যুৎ সঞ্চালন এ লাইন নদীতে বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এছাড়া পাশের ফসলি জমি ও বাড়িঘরও ভাঙনের মুখে পড়েছে। সরকারিভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে এমন জায়গায় ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হলেও বিষয়টি কি দেখার কেউ নেই?
অতীতে বিভিন্ন সময়ে আমরা লক্ষ করেছি, বিভিন্ন স্থানে বেপরোয়া বালু উত্তোলনের ঘটনা ঘটলেও এসব অনিয়ম প্রতিরোধে স্থানীয় প্রশাসন রহস্যময় ভূমিকা পালন করেছিল। এসব ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসনের নির্বিকার ভূমিকার কারণে বেপরোয়া বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িতরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। অতীতে আমরা লক্ষ করেছি, বালু উত্তোলনের বিষয়ে আইন থাকলেও কর্তৃপক্ষ তা প্রয়োগে খুব একটা সক্রিয় নয়। সারা দেশে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে, এটাই প্রত্যশা।