নির্বাচনি রোডম্যাপ
গণতন্ত্রের স্বার্থে দ্রুত আঁকা হোক

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন শনিবার এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে একটা অনিশ্চয়তা চলে আসছে। নির্বাচনের রোডম্যাপ এলে এ অস্থিরতা কেটে যাবে বিধায় সরকার দ্রুততর সময়ের মধ্যে তা প্রকাশের চেষ্টা করছে। তার এ বক্তব্য আশার সঞ্চার করেছে সন্দেহ নেই, তবে বহুল আকাঙ্ক্ষিত রোডম্যাপটি কবে প্রকাশ হবে, তা কিন্তু স্পষ্ট হয়নি। উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার পর থেকে এ সরকারের মেয়াদকাল, সংস্কার কাজ ও আগামী সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নিয়ে নানা মহলেই প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে, জনমনে কৌতূহলও ক্রমেই বাড়ছে। স্বীকার করতেই হবে, নানা প্রতিকূলতা মোকাবিলা করেই অন্তর্বর্তী সরকার তার লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগের ত্রুটিযুক্ত শাসনব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়ে কার্যকর করে গড়ে তোলা তাদের পক্ষে রাতারাতি সম্ভব নয়। এ জন্য সময়ের প্রয়োজন রয়েছে।
সামগ্রিক অবস্থাদৃষ্টে বোঝা যাচ্ছে, যত দ্রুত সংস্কার শেষ করে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা যাবে, জাতির জন্য তা ততই মঙ্গলজনক হবে। কারণ সংস্কার কাজে দীর্ঘ সময় নেওয়া হলে দেশে অস্থিরতা বাড়বে, জাতি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে। তাই আমাদের বক্তব্য হলো, সংস্কারের পরিধি কমিয়ে আনলেই ভালো। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনি ব্যবস্থার সংস্কারই জরুরি বলে মনে করি আমরা। মনে রাখতে হবে, বিগত সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা আন্দোলন করেছে মূলত গণতন্ত্র তথা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা দেশ শাসনের উদ্দেশ্য সামনে রেখে।
বলা বাহুল্য, এজন্য সব রাজনৈতিক দলের সদিচ্ছা ও অংশগ্রহণের গুরুত্বও অনেক। তাদের মধ্যেও রয়েছে পুরোনো ধ্যান-ধারণা থেকে বের হয়ে আসার প্রয়োজনীয়তা। অবশ্য সেটি সেই দলের ভেতরে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতেই হতে হবে। দেশকে গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনতে রাজনৈতিক ব্যবস্থার যে সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা জনমনে রয়েছে, তার পূর্ণ প্রতিফলন ঘটাতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরেও এ উদ্যোগের প্রয়োজন রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণার ক্ষেত্রে সরকারের সঙ্গে তাই রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহযোগিতার মনোভাব, দেশকে গণতান্ত্রিক ধারায় সামনে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয়, জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধিতে আন্তরিকতা ও আস্থার পরিচয় এবং দল-মতের ঊর্ধ্বে ওঠার মতো মানসিকতার প্রকাশ ঘটানো জরুরি। দেশকে গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে দেওয়ার যে ম্যান্ডেট সরকারের রয়েছে, তা পূরণে দ্রুততর সময়ে নির্বাচনি রোডম্যাপ প্রকাশ করা হবে, এটাই প্রত্যাশা।