অনিরাপদ সড়ক
শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিন
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
সারা দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলো নিরাপদ করতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া সত্ত্বেও কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলছে না। বিষয়টি উদ্বেগজনক। বুধবার রাতেও রাজধানীর অদূরে সাভারে সড়ক দুর্ঘটনায় নারী, শিশুসহ চারজন নিহত হয়েছেন। রাত ২টার ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে একটি অ্যাম্বুলেন্সকে যাত্রীবাহী দুটি বাস পেছন থেকে ধাক্কা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এদিকে বুধবার গণমাধ্যমে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক কর্তৃক পাঠানো সড়ক দুর্ঘটনার বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশে ২০২৪ সালে ৬ হাজার ৯২৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ২৯৪ জন নিহত হয়েছেন; আহত ১২ হাজার ১৯ জন। ২০২৩ সালের তুলনায় গত বছর দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির সংখ্যা বেড়েছে, বেড়েছে আহতের সংখ্যাও। রোড সেফটি বলছে, এসব দুর্ঘটনায় মানবসম্পদের ক্ষতির আর্থিক মূল্য ২১ হাজার ৮৮৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা। বস্তুত কোনো প্রাণহানির ক্ষতিই অর্থমূল্যে নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। সম্প্রতি যাত্রীকল্যাণ সমিতি কর্তৃক প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত বছর ৬ হাজার ৩৫৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৮ হাজার ৫৪৩ জন নিহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ১২ হাজার ৬০৮ জন। রাড সেফটির তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ১১৮টি নৌদুর্ঘটনায় নিহত ১৫২, আহত ১৬১ এবং নিখোঁজ রয়েছেন ৩৯ জন। ৩৪৭টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ৩২৪ জন নিহত এবং ২৭৭ জন আহত হয়েছেন।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ অনুযায়ী, দুর্ঘটনাগুলো সবচেয়ে বেশি হয়েছে আঞ্চলিক সড়কে, এর সংখ্যা ২ হাজার ৭৩৬টি। আর ২ হাজার ৩৫৭টি হয়েছে জাতীয় মহাসড়কে, ৯৭২টি গ্রামীণ সড়কে এবং ৭৮৪টি শহর এলাকার সড়কে। এ চিত্র থেকে ধারণা পাওয়া যায় দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলো কতটা অনিরাপদ। রোড সেফটির পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ অনুযায়ী, দুর্ঘটনার মধ্যে সবেচয়ে বেশি হয়েছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে। বিভিন্ন গবেষণায় এটি স্পষ্ট হয়েছে, অতিরিক্ত গতি ও চালকের বেপরোয়া মনোভাবের কারণে সারা দেশে দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়ে চলেছে। সড়ক দুর্ঘটনার অন্য কারণগুলোও বহুল আলোচিত। কাজেই দেশে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে জরুরি ভিত্তিতে এক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যাগুলোর সমাধানে পদক্ষেপ নিতে হবে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে পথচারী ছিল ৫১ শতাংশের বেশি। কাজেই রাজধানীসহ সারা দেশের পথচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। পরিবহণচালকদের অধিকাংশই অদক্ষ-প্রশিক্ষণহীন-লাইসেন্সবিহীন। বহু যানবাহনের নেই ফিটনেস। চাঁদাবাজিসহ পরিবহণ খাতের আরও সমস্যা বহুল আলোচিত। এসব সমস্যার সমাধান না হলে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের পরও সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে কি না সন্দেহ।