ন্যায্যমূল্য বঞ্চিত কৃষক: সবজি চাষিদের দিকে তাকান
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কাঁচাবাজার অর্থনীতির একটা প্যারাডক্স হলো, পণ্যের দাম বেড়ে গেলে ভোক্তারা সংকটে পড়েন আর দাম কমে গেলে উৎপাদকরা পড়েন বিপাকে। এ দুয়ের সমন্বয়ই পারে দুই কূল রক্ষা করতে। রংপুর মহানগরসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় ফুলকপির চাষিরা পড়েছেন বিপাকে। ন্যায্য দাম দূরের কথা, প্রতিটি কপি ২ টাকায়ও বিক্রি করতে পারছেন না তারা। তাই এসব অঞ্চলের কপি এখন গবাদিপশুর খাদ্য। যুগান্তরের পক্ষ থেকে রংপুর এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, এবার কপির চাষ হয়েছে প্রচুর। বর্তমান অবস্থা হলো, জমিতে কপির পচন ধরছে, অথচ ক্রেতা নেই। লোকসানের বোঝা ভারি হচ্ছে দিন দিন। বীজের টাকাও উঠছে না। এমনও দেখা গেছে, বাজারে কপির ন্যায্যমূল্য না পেয়ে সেগুলো ড্রেনে ফেলে দিচ্ছেন চাষিরা। উল্লেখ করা যেতে পারে, ফুলকপির প্রতিটি চারা কিনতে হয় দেড় থেকে দুই টাকায়। এরপর চাষ, সার, কীটনাশক এবং শ্রমের মূল্য যোগ করলে উৎপাদন খরচের অঙ্কটা বড় হয়। অথচ দুই টাকায়ও বিক্রি করা যাচ্ছে না একটি কপি।
আমরা সবসময়ই কৃষকের পণ্যের ন্যায্যমূল্যের কথা বলে এসেছি। বর্তমানে সবজির মৌসুম চলছে। এবার উৎপাদনও হয়েছে ভালো। তাই বাজারে সবজির দামে স্বস্তি ফিরে এসেছে। কিন্তু ভোক্তার স্বস্তিই শেষ কথা নয়। উৎপাদক তথা কৃষক যদি তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য না পায়, তাহলে তো দেশের একটা বড় শ্রেণি তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। এটাও সত্য যে, কোনো মৌসুমে কৃষক যদি তার পণ্যের ন্যায্যমূল্য না পান, তাহলে পরবর্তী মৌসুমে তারা ওই পণ্যটির চাষ করতে নিরুৎসাহিতবোধ করেন। জমিতে অন্য কিছু ফলিয়ে থাকেন। তাই আমরা আশা করব, ফুলকপিসহ সব সবজির ক্ষেত্রে চাষি যেন তার পণ্যের ন্যায্যমূল্য পান, তা নিশ্চিত করা হবে। কীভাবে বাজারমূল্য ঠিক রেখে কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা যায়, অর্থনীতিবিদসহ দেশের কর্তাব্যক্তিদেরই সেই উপায় বের করতে হবে। এ দেশের অর্থনীতির চাকা চালু রেখেছে যেসব শ্রেণি, কৃষক তাদের মধ্যে অগ্রগণ্য। তারা যাতে শোষণের শিকার না হন, সেদিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে। পণ্যের সিন্ডিকেটসহ বাজারকে নিয়মের বাইরে নিয়ে যায় যারা, চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধেও নিতে হবে ব্যবস্থা।