
প্রিন্ট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৪১ এএম

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

প্রতীকী ছবি
আরও পড়ুন
সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতারা অবৈধভাবে উপার্জিত বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন। বিদেশে পাচার হওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থ ফেরত আনার লক্ষ্যে জোরালো উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বস্তুত বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার কাজটি কঠিন। জানা যায়, পাচার করা অর্থ ফেরাতে অন্তর্বর্তী সরকার আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর দ্বারস্থ হয়েছে, চলছে অভ্যন্তরীণ তদন্তও। সম্পদ ফেরানোয় প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে পাচারকারীদের সম্পদের তথ্যের ঘাটতি। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে পাচার করা সম্পদ ফেরাতে গঠিত টাস্কফোর্সের দ্বিতীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভার কার্যবিবরণীতে পাচার সম্পদ ফেরানোর এ চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বস্তুত যারা অবৈধভাবে অর্থ ও সম্পদ উপার্জন করেন এবং তা বিদেশে পাচার করেন তারা নানারকম কৌশল অবলম্বন করে থাকেন। কাজেই এ বিষয়ক তথ্য জানার জন্য কর্তৃপক্ষকে নানামুখী পদক্ষেপ নিতে হবে।
জানা যায়, সাবরেজিস্ট্রি অফিসগুলোর সীমাবদ্ধতার কারণে অর্থ পাচারকারীদের সম্পত্তির তথ্য সংগ্রহ চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়ছে। এ সমস্যার সমাধানে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। সম্প্র্রতি প্রকাশিত অর্থনৈতিক শ্বেতপত্রে উঠে এসেছে, আওয়ামী লীগের শাসনামলে ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দেশ থেকে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। এ অর্থ গত ৫ বছরে দেশের জাতীয় বাজেটের চেয়ে বেশি। আওয়ামী লীগ সরকারের আস্থাভাজন এক ডজন রাজনীতিক, ব্যবসায়ী ও আমলার বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অনুসন্ধান করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি)। এ অনুসন্ধান অব্যাহত রাখা দরকার। দেশ থেকে অর্থ পাচারকারী এবং তাদের সহায়তাকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও সংশ্লিষ্টরা। পাচারকারীদের পাশাপাশি তাদের সহায়তাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিলে ভবিষ্যতে পাচারের প্রবণতা কমতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পাচারকৃত অর্থের সুবিধাভোগীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। বস্তুত পাচার করা অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করতে হয়। পাচারকৃত অর্থ ফেরানোর লক্ষ্যে কাজ শুরু হলে দ্রুত সুফল পাওয়া যায় না।
বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটসহ (বিএফআইইউ) বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রাথমিক তদন্তে দেশের প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তি ও ব্যবসায়িক গ্রুপের নামে দেশে-বিদেশে বিপুল অঙ্কের অর্থসম্পদের সন্ধান মিলেছে। এগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই জালজালিয়াতির মাধ্যমে অর্জিত। এসব অর্থের একটি অংশ তারা বিদেশে পাচারও করেছেন। বিএফআইইউ বিভিন্ন ব্যক্তির নামে বিভিন্ন দেশে থাকা অর্থসম্পদের তথ্য চেয়েছে মানি লন্ডারিং নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা এগমন্ট গ্রুপের কাছে। বাংলাদেশ এগমন্ট গ্রুপের সদস্য। বাংলাদেশ থেকে যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি টাকা পাচার হচ্ছে, সেসব দেশও এ গ্রুপের সদস্য। বিভিন্ন ব্যক্তির এ বিষয়ক তথ্য সংগ্রহে সব ধরনের তৎপরতা অব্যাহত রাখতে হবে। যেহেতু পাচারের অর্থ দেশে ফেরত আনার ক্ষেত্রে সাফল্য কম, সেহেতু এ ব্যাপারে জোরালো তৎপরতা অব্যাহত রাখা দরকার। ভবিষ্যতে কেউ যাতে কোনো প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ সম্পদ অর্জন করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতেও পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।