Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

জ্বালানি তেল নিয়ে প্রতারণা

নিয়মিত নজরদারি প্রয়োজন

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

জ্বালানি তেল নিয়ে প্রতারণা

দেশে পেট্রোল ও অকটেনের সঙ্গে মেশানো হচ্ছে অপরিশোধিত কনডেনসেট। শনিবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-সম্প্রতি কয়েকটি বেসরকারি রিফাইনারি কোম্পানির কনডেনসেট উত্তোলন এবং পরিশোধিত জ্বালানি বিক্রির পরিসংখ্যান থেকে এ ভয়াবহ তথ্য পেয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। অভিযোগ উঠেছে, বেশ কয়েকটি বেসরকারি রিফাইনারি ও ফ্রাকশনেশন প্ল্যান্ট এই ভেজাল তৈরিতে পেট্রোল পাম্প মালিকদের সহায়তা করছে। এদিকে সংশ্লিষ্টরাও বলছেন, দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ গ্যাসক্ষেত্রের তলানি কনডেনসেট সরকারের কাছ থেকে বরাদ্দ নিয়ে কয়েকটি বেসরকারি ফ্রাকশনেশন প্ল্যান্ট সরাসরি পেট্রোল পাম্পে বিক্রি করছে। অনেক প্ল্যান্ট আবার কোনোরকম পরিশোধন না করেই গ্যাসক্ষেত্র থেকে তা সরাসরি বাইরে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকার মুনাফা লুটছে। এসব ফ্রাকশনেশন প্ল্যান্টের অনিয়মের কারণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কনডেনসেট বরাদ্দের তুলনায় ভ্যাট পাচ্ছে কম।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বেশ কয়েকটি বেসরকারি রিফাইনারি ও ফ্রাকশনেশন প্ল্যান্ট পরিশোধনের জন্য সরকারের কাছ থেকে যে পরিমাণ কনডেনসেট ও ন্যাফথা নিয়েছে, সে তুলনায় বিপিসিকে অকটেন, পেট্রোল ও ডিজেল অর্থাৎ পেট্রোলিয়াম পণ্য বুঝিয়ে দিয়েছে অনেক কম। শতাংশের হিসাবে কোনো প্রতিষ্ঠান ৬৭ দশমিক ৬৮, কোনোটি আবার ৬৯ দশমিক ৪৮ পণ্য বুঝিয়ে দিয়েছে। অথচ সরকারি আইন অনুযায়ী, স্থানীয় কনডেনসেট বরাদ্দের ১০ শতাংশ কারিগরি সিস্টেম লস ছাড়া বাকি ৯০ শতাংশ অকটেন, পেট্রোল বা ডিজেলই বিপিসির কাছে বিক্রি করতে হবে।

পেট্রোল পাম্পগুলোয় সরাসরি কনডেনসেট বিক্রি প্রসঙ্গে বিপিসি চেয়ারম্যান অবশ্য জানিয়েছেন, সারা দেশে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। এ ধরনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিষয়টি সংশ্লিষ্টরা জানলেও বিগত সরকারের সময়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তাদের পরামর্শ, সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে যাদের কনডেনসেট নিয়ে সরকারকে সর্বোচ্চ অকটেন ও পেট্রোলের মতো দামি পেট্রোলিয়াম বিক্রি এবং সর্বোচ্চ ভ্যাট দেওয়ার রেকর্ড আছে, শুধু তাদেরই কনডেনসেট বরাদ্দ দেওয়া উচিত। উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশের কয়েকটি বেসরকারি এবং একটি সরকারি ফ্রাকশনেশন প্ল্যান্ট কনডেনসেট বরাদ্দ পাচ্ছে।

অধিক মুনাফার জন্য কনডেনসেট বিপিসির কাছে বিক্রি না করে বিভিন্ন পাম্পে বিক্রির যে চিত্র উঠে এসেছে, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এমন অনিয়মের কারণে যে সরকার বছরে শতকোটি টাকার বেশি রাজস্ব হারাচ্ছে, তা বলাই বাহুল্য। আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, এর ফলে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। একইসঙ্গে যানবাহনের ইঞ্জিন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গাড়ির মালিকরা জেনে হোক বা না জেনে, পরিবেশ-দূষণে ভূমিকা রাখছেন। এমনিতেই প্রতিটি যানবাহনের ইঞ্জিন ডিজাইন করা হয় নির্দিষ্ট জ্বালানির জন্য। সেই জ্বালানি না দিলে ইঞ্জিনের পারফরম্যান্স যেমন কমে যায়, তেমনি শক্তিও উৎপন্ন করে কম। এতে জ্বালানি খরচ বাড়ে, যানবাহনের আয়ু কমে যায়। ফলে সার্ভিস লাইফ শেষ হওয়ার আগেই বদলাতে হয় নানা যন্ত্রাংশ। অর্থাৎ যানবাহনের রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বেড়ে যায়। তাই গাড়ির মালিকদেরও খেয়াল রাখা উচিত, তার গাড়ি বিশুদ্ধ ও মানসম্মত জ্বালানিতে চলছে কিনা। সরকারের দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোর উচিত খুচরা পর্যায়ে অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি রিফাইনারি ও ফ্রাকশনেশন প্ল্যান্টগুলোর ওপর নজরদারি বাড়ানো। সরকার এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম