Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

ব্যাংক ডাকাতির চেষ্টা

কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে জরুরি পদক্ষেপ কাম্য

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ব্যাংক ডাকাতির চেষ্টা

বৃহস্পতিবার ঢাকার কেরানীগঞ্জে রূপালী ব্যাংকের জিনজিরা শাখায় যে ডাকাতির চেষ্টা হয়েছে, তাকে নিছক অপরাধকাণ্ড হিসাবে দেখার সুযোগ নেই। শুক্রবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে ডাকাতরা ব্যাংকটিতে হানা দেওয়ার ৪ ঘণ্টা পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করে। জিম্মিদশা থেকে অক্ষত অবস্থায় মুক্ত হন ব্যাংকের গ্রাহক-স্টাফরা। আত্মসমর্পণের সময় তাদের কাছ থেকে লুট করা নগদ ১৮ লাখ টাকা, চারটি খেলনা পিস্তল, দুটি চাকু, একটি লোহার পাইপ, একটি স্কুলব্যাগ, তিনটি মাস্ক, তিন জোড়া হ্যান্ড গ্লাভস এবং তিনটি কালো চশমা উদ্ধার করে যৌথ বাহিনী। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, ডাকাতিকাণ্ডে যে তিনজন আত্মসমর্পণ করেছে, তাদের মধ্যে দুজনের বয়স ১৬, অপরজনের ২২ বছর। অর্থাৎ তারা কিশোর বয়সি।

পুলিশের কাছ থেকে জানা যায়, ব্যাংক ডাকাতি করতে এ কিশোররা বিভিন্ন সিনেমা ও অনলাইনে ভিডিও দেখে পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সবাই প্রায় একই রকম ড্রেস পরিধান করে চারটি খেলনা পিস্তল ও ছুরি নিয়ে ব্যাংক ডাকাতিতে নামে। স্বভাবতই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুরুত্বের সঙ্গে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেয়। জিম্মি উদ্ধার ও ডাকাতদের আটকের উদ্দেশ্যে শুরু হয় পুলিশ, র‌্যাব, সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা। ডাকাতদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনার সময় শর্ত আসে, একজন কিডনি রোগীকে সাহায্য করার জন্য ওদের ১৫ লাখ টাকা প্রদান ও নিরাপদে বেরিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এতে রাজি হলে ডাকাতরা আত্মসমর্পণ করে।

পুলিশের ধারণা, ‘কিশোর অ্যাডভেঞ্চার’ থেকে তারা এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে। আর আটককৃতরা বলছে, মৃত্যুপথযাত্রী এক কিডনি রোগীর চিকিৎসার অর্থের জন্য তারা এ অপকর্মের পরিকল্পনা করে। কারণ যাই হোক, এটা যে বড় অপরাধ, তা স্বীকার করতেই হবে। পুলিশের তদন্ত যেমন চলমান থাকবে, কিশোরত্রয় কেন এমন কাজে জড়িয়ে পড়ল, তাও ভেবে দেখার প্রয়োজন রয়েছে। এমনিতেই রাজধানীসহ সারা দেশে কিশোর অপরাধের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে দেখছি আমরা। ৫ আগস্টের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে পুলিশের অনুপস্থিতিতে এর মাত্রা বেড়ে যায় ভয়াবহভাবে। আশার কথা, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি ঘটছে, তবে তা আশ্বস্ত হওয়ার মতো যে নয়, কেরানীগঞ্জের ঘটনাই এর প্রমাণ। আমরা আশা করব, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জনজীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে টহল জোরদার করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে। একইসঙ্গে কিশোরদের মধ্যে এমন অপরাধপ্রবণতার কারণও খুঁজে বের করতে হবে। এর পেছনে ইন্টারনেট ও আকাশ সংস্কৃতির প্রভাব কী মাত্রায় পড়ছে, তা নিয়েও গবেষণা হওয়া দরকার। ভুলে গেলে চলবে না, এসব কিশোর ছোটখাটো অপরাধ করে পার পেয়ে গেলে একসময় বড় অপরাধী হয়ে উঠতে পারে। তাই প্রত্যেক কিশোরকে প্রকৃত বিবেকবান মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে যার যার অবস্থান থেকে প্রয়াস চালাতে হবে। কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে যারা কিশোরদের অপরাধ জগতে নিয়ে যাচ্ছে, তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। সরকার এ বিষয়ে গুরুত্ব দেবে, এটাই প্রত্যাশা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম