রাজনৈতিক বিবেচনায় ঋণখেলাপি, ঋণ আদায়ে কঠোরতাই কাম্য

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

দেশের ব্যাংক খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা বিপুল অঙ্কের খেলাপি ঋণ। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গত সাড়ে ১৫ বছরে খেলাপি ঋণ নবায়নে চলেছে ছাড়ের ছড়াছড়ি। ওই সময়ে খেলাপি ঋণ যেমন বেড়েছে, তেমনি খেলাপি ঋণ নবায়নে একের পর এক ছাড় দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। জানা যায়, খেলাপি ঋণ নবায়ন বা পুনঃতফসিলের ক্ষেত্রে আর ছাড় দেওয়া হবে না। গত সরকারের আমলে রাজনৈতিক বা ব্যক্তিবিশেষ বিবেচনায় যেসব ছাড় দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর মেয়াদ নতুন করে বাড়ানো হবে না। খেলাপিদের ছাড় দিতে গিয়ে যেসব ক্ষমতা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল, ব্যাংক খাত সংস্কারের অংশ হিসাবে সেগুলো পর্যায়ক্রমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ ইতিবাচক। অতীতে ব্যাংকভেদে ও খেলাপি ব্যক্তিভেদে নানাভাবে ছাড় দেওয়া হয়েছিল। আইনকানুন বা বিধিবিধানের কোনো তোয়াক্কা না করে ব্যক্তিবিশেষের চাহিদামতো খেলাপি ঋণ নবায়ন করা হয়েছিল।
২০০৯ সালের শুরুতে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রথমেই খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা শিথিল করে খেলাপিদের ছাড় দেয়। ২০১৫ সালে ঋণ পুনর্গঠনের নামে খেলাপিদের দেওয়া হয় বিশেষ সুবিধা। বিশেষ ছাড়ে খেলাপিরা ঋণ নবায়নের সুযোগ পান। এ সময় খেলাপি ঋণ বেড়ে গেলে ঋণ অবলোপনের ক্ষেত্রেও দেওয়া হয় বিশেষ ছাড়। ২০১৮ সালেও খেলাপি ঋণ নবায়নে বিশেষ ছাড় দেওয়া হয় বড় উদ্যোক্তাদের জন্য। ২০২০ সালে করোনার সংক্রমণ শুরু হলে ঋণগ্রহীতার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ পরিশোধে ছাড় দেয়। ২০২২ সালের জুলাইয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর হিসাবে নিয়োগ পান আবদুর রউফ তালুকদার। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পরপর ঋণখেলাপিদের আরও বড় ছাড় দিয়ে সার্কুলার জারি করেন। পরবর্তীকালে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে ঋণখেলাপিদের আরও একদফা ছাড় দেওয়া হয়। ছাড়গুলোর আওতায় ২০২৩ সালে বিপুল অঙ্কের খেলাপি ঋণ নবায়ন করা হয়। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল-এ সময়ে ২ লাখ ৫৪ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ বিশেষ ছাড়ে বড় গ্রুপ বা কোম্পানির ঋণ নবায়ন করা হয়েছে। বর্তমানে ঢাকায় অবস্থানরত আইএমএফ মিশন ব্যাংক খাতের খেলাপিদের বিষয়ে কঠোর হতে বলেছে। আমরাও মনে করি, খেলাপি ঋণ আদায়ে কর্তৃপক্ষের কঠোর হওয়া উচিত।
বস্তুত খেলাপি ঋণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ব্যাংক খাতের জন্য বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির কারণে সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতে অস্বস্তির মাত্রাও বেড়েই চলেছে। খেলাপি ঋণের বৃদ্ধি অন্যসব সূচককে নেতিবাচক ধারায় নিয়ে যায়। যেহেতু এ সমস্যা ব্যাংক খাতে দুরারোগ্য ব্যাধির রূপ নিয়েছে, সেহেতু এ খাতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে যত দ্রুত সম্ভব যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। সুশাসনের অভাবেই এ খাতের রোগ এতটা জটিল আকার ধারণ করেছে। কাজেই জরুরি ভিত্তিতে এ খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিতে হবে। ব্যাংক খাতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে টাস্কফোর্সের সুপারিশ বাস্তবায়নে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।