বিক্রম মিশ্রির ঢাকা সফর
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে মেঘ কেটে যাক
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বিগত সরকার পতনের পর ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে কিছুটা জটিলতা দেখা দিলেও বর্তমানে দিল্লির পক্ষ থেকে তা নিরসনের উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রির সংক্ষিপ্ত ঢাকা সফরে এরই আভাস মিলেছে। সোমবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে এবং তা আরও জোরদার করতে তিনি জানিয়েছেন দিল্লির আগ্রহের কথা। জানিয়েছেন, বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে যে কালো মেঘ জমেছে, সেটিও দূর করতে চান তারা। দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকেও বাংলাদেশের সঙ্গে ইতিবাচক, গঠনমূলক এবং পারস্পরিক স্বার্থের সম্পর্ক স্থাপনের কথা মিশ্রির বক্তব্যে উঠে এসেছে। তিনি জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ভারত নিবিড়ভাবে কাজ করতে আগ্রহী। এ সম্পর্কের কেন্দ্রে থাকবে জনগণ। অতীতেও এ সম্পর্ক জনগণকে ঘিরেই ছিল।
বিক্রম মিশ্রির একদিনের এ সফরের মাধ্যমে দুদেশের সম্পর্কে কালো মেঘ কেটে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে দিল্লির ব্যক্ত করা প্রতিশ্রুতির বাস্তব প্রতিফলন ঘটানোই হবে সম্পর্কোন্নয়নের একমাত্র পথ। সেক্ষেত্রে আস্থার যে ঘাটতি রয়েছে, তা দূরীকরণে দিল্লিকেই উদ্যোগী হতে হবে। এদেশের সংখ্যালঘুদের বিষয়ে ভারতের মিডিয়ায় যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, অবিলম্বে তা বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে বিদেশি সাংবাদিকসহ সবাই সরেজমিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে যেতে পারেন; দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিনও এমনটি উল্লেখ করেছেন। অভ্যন্তরীণ ইস্যু নিয়ে কোনো দেশই অন্য দেশের নাক গলানো পছন্দ করে না। সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে এটি সব দেশেরই কূটনৈতিক নীতি, যা ঢাকাও মেনে চলে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারে এ বিষয়টিও দিল্লি আমলে রাখবে বলে প্রত্যাশা।
বাংলাদেশ সব সময়ই বন্ধুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্কে বিশ্বাসী। ভারত আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী। আমরা বন্ধু বদলাতে পারি, প্রতিবেশী বদলাতে পারব না। দুদেশের মধ্যকার সুসম্পর্কও একদিনের নয়। বাণিজ্য তো আছেই, পর্যটন ও চিকিৎসার মতো নানা ক্ষেত্রেও দুদেশ একে অপরের কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়ে এসেছে। তবে গত রেজিমে আমরা দেখেছি, ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটা স্বাভাবিক ছিল না। দেশের স্বার্থকে খাটো করে দেখার প্রচেষ্টাও ছিল। ভারতের সহযোগিতা আমাদের প্রয়োজন, তবে এক্ষেত্রে উভয় দেশের নেতৃত্বেরই সদিচ্ছা থাকতে হবে। যেমন দীর্ঘদিন ধরে বেশকিছু বিষয় এখনো আলোচনাধীন রয়েছে। দুদেশের জনগণের প্রত্যাশা, তিস্তা চুক্তি, বাণিজ্য ঘাটতি ও সীমান্ত হত্যার মতো তিনটি বড় অমীমাংসিত বিষয়ের দ্রুত সমাধান হবে। সম্পর্কোন্নয়নের স্বার্থেই বিষয়গুলোর নিষ্পত্তি প্রয়োজন।
ভারত মুক্তিযুদ্ধে আমাদের সহযোগিতা করেছিল এবং অসংখ্য শরণার্থীর প্রতি মানবিক হাত বাড়িয়েছিল। এজন্য ভারত সরকার ও ভারতীয় জনগণের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। কিন্তু পরবর্তীকালে আমাদের বেশকিছু মন খারাপ করা অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমরা চাই, দুদেশের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়ন করে একটি সমতাভিত্তিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে, সম্পর্কের বহুমাত্রিকতায় দিন দিন যা সুদৃঢ় হবে বলেই আমরা বিশ্বাস করি। কোনো পক্ষের সদিচ্ছার অভাবে তা যেন নষ্ট না হয়, সে ব্যাপারে দুদেশের সরকারকেই সজাগ থাকতে হবে। একটি রাষ্ট্রে সরকার আসবে, সরকার যাবে; কিন্তু জনগণ সব সময় থাকবে। সম্পর্ক হবে ওই রাষ্ট্রের জনগণ এবং তাদের বৈধ প্রতিনিধিদের সঙ্গে। স্বার্থসমতার ভিত্তিতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সব সময় অটুট থাকবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।