Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

গ্রেনেড হামলা মামলার রায়: ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

গ্রেনেড হামলা মামলার রায়: ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে

আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় সম্পূরক অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে বিচারিক আদালতের বিচার অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। রোববার বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ডেথ রেফারেন্স নাকচ এবং আসামিদের আপিল মঞ্জুর করে এই রায় দেওয়া হয়। বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেন।

এ রায়ের ফলে এই মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ দণ্ডিত ৪৯ আসামির সবাই খালাস পেয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৯ জন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত, ১৯ জন যাবজ্জীবন এবং ১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়েছিল।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, মুফতি আব্দুল হান্নানের জবানবন্দির ভিত্তিতে যে সম্পূরক অভিযোগপত্রে এ মামলার বিচার শুরু হয়েছিল, সেই অভিযোগপত্রই ছিল অবৈধ। এছাড়া কোনো সাক্ষী কোনো আসামিকে গ্রেনেড ছুড়তে দেখেননি, তাই শুধু স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে সাজা দেওয়া যায় না। ন্যায়বিচার পেয়েছেন উল্লেখ করে আসামির পক্ষের আইনজীবীরাও জানিয়েছেন, সাক্ষ্য ও আইন কোনোদিক দিয়েই এই মামলা প্রমাণিত হয়নি। অবশ্য রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছেন, তা পুরোটা দেখে তারপর আপিল করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনাটি যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হয়েছে, তা অতীতের ঘটনাবলি দেখলেই স্পষ্ট হয়। আমরা দেখেছি, এক-এগারোর সরকারের সময়ে এ ঘটনায় তদন্ত কর্মকর্তারা যে চার্জশিট দিয়েছিলেন, পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তা পুনঃতদন্তের উদ্যোগ নেয়। সেসময় আব্দুল কাহহারকে প্রধান করে যে তদন্ত দল মামলাটির চার্জশিট নতুন করে জমা দেয়, সেখানে আসামি ও সন্দেহভাজনদের নাম যোগ-বিয়োগ হতে দেখা যায়। তদন্ত প্রতিবেদনও পালটে যায়। মামলাটির পর্যবেক্ষণে হাইকোর্টও বলেছেন, মামলায় কোনো চাক্ষুষ সাক্ষী ছিল না। আবার মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তিও সংশ্লিষ্ট ম্যাজিষ্ট্রেট দ্বারা যথাযথ পরীক্ষা এবং গ্রহণ করা হয়নি। এক আইনজীবীও বলেছেন, প্রথম অভিযোগপত্রটি গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ সেটি মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করেই তৈরি করা হলেও পরে তিনি তা প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। দ্বিতীয় অভিযোগপত্রেও মামলার ২৫ জন সাক্ষীর কেউই বলেননি: আমি গ্রেনেড ছুড়েছি বা ছুড়তে দেখেছি। ফলে প্রকৃত খুনি কে সেটির প্রমাণ নেই। এ কারণে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা অনুসারে কাউকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যায় না।

আলোচিত এ মামলার রায়ে আদালত প্রকৃত বিচারের উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন বলেই মনে করি আমরা। উল্লেখ্য, ২০ বছর আগে অর্থাৎ ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে যে গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে, এতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ ২৪ জন নিহত হন, আহত হন অনেকে। বলার অপেক্ষা রাখে না, হামলার ঘটনায় স্বজনরা তার প্রিয়জনকে হারিয়েছেন, আহত অনেক মানুষ এখনও সেই দুঃসহ স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছেন, কেউ কেউ শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছেন ক্ষতচিহ্নও। তাদের সবাই এদেশেরই নাগরিক। প্রকৃত বিচার পাওয়ার অধিকার তাদের সবারই রয়েছে। কাজেই সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এ হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তি নিশ্চিত করা সত্য প্রতিষ্ঠার স্বার্থেই প্রয়োজন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম