Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

দুর্নীতি দিয়ে গড়া সম্পদ

অধিগ্রহণ করা হচ্ছে না কেন?

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দুর্নীতি দিয়ে গড়া সম্পদ

বৃহস্পতিবার রাজধানীতে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে সিপিডির বিশেষ ফেলো এবং শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য দেশের অর্থনীতি নিয়ে বেশকিছু চিন্তা উদ্রেককারী কথা বলেছেন।

তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভয়ংকর অবস্থায় রেখে গেছে। উত্তরাধিকার সূত্রেই এ খারাপ অবস্থা পেয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

তিনি বলেন, ব্যাংক ও জ্বালানি খাতে দুর্নীতি ও লুণ্ঠনের মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়া হয়েছে। ওই অবৈধ সম্পদ অধিগ্রহণ করা না গেলে বিপ্লবের মাহাত্ম্য কী? তিনি প্রশ্ন রেখেছেন, দুর্নীতি ও লুণ্ঠনের মাধ্যমে গড়ে তোলা সম্পদ কেন বাজেয়াপ্ত করা হলো না? এ সম্পদ কোথায় গেল? এ সম্পদ আইনি প্রক্রিয়ায় সরকার কেন অধিগ্রহণ করল না? লুণ্ঠনকারীদের মধ্যে যাদের ব্যাংক ঋণ আছে, সেগুলো সমন্বয়ের জন্য তাদের সম্পত্তি দ্রুত সময়ের মধ্যে অধিগ্রহণ করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

সেমিনারে উচ্চারিত ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের কথাগুলো গুরুত্বের দাবি রাখে। গত সরকারের শাসনামলে অবিশ্বাস্য অঙ্কের টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার বলেছে, সেসব টাকা দেশে ফেরত আনা হবে। পাচারকৃত টাকার কত অংশ অথবা পুরোটাই ফেরত আনা যাবে কিনা, এটা এক বড় প্রশ্ন। আমরা চাইব, পুরোটা না হলেও পাচারকৃত টাকার সিংহভাগই ফেরত আনা হবে। এটা গেল পাচারকৃত টাকার প্রশ্ন। লুণ্ঠনকারীরা শুধু বিদেশেই টাকা পাচার করেননি, দেশের অভ্যন্তরেও তারা অবৈধ টাকায় বিশাল সম্পদ গড়ে তুলেছেন। এসব সম্পদ চিহ্নিত করাটাও কঠিন কাজ নয়। যেমন দেশের অভ্যন্তরে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের অনেক সম্পদের খবর আমরা পেয়েছি; কিন্তু সেগুলোয় সরকার এখনো হাত দেয়নি। যারা ঋণখেলাপি হয়েছেন, ব্যাংকের কাছে বন্ধক থাকা তাদের সম্পদের হিসাবও রয়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর কাছে। সেইসব সম্পদ অধিগ্রহণ করে ঋণ সমন্বয় করা কি খুব কঠিন কাজ? আমরা এটা খুব ভালো করেই জানি, দেশের বিভিন্ন স্থানে যেসব রিসোর্ট রয়েছে, সেগুলোর কোন্ কোন্টি অবৈধ টাকায় নির্মিত হয়েছে। ঢাকা শহরে অনেকের অবিশ্বাস্য সংখ্যক ফ্ল্যাট রয়েছে। অনেক জমিও কেনা রয়েছে দুর্নীতির টাকায়।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের কথাগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে সরকারকে। দেশের বর্তমান অর্থনীতির যে অবস্থা, তাতে দুর্নীতিলব্ধ টাকায় গড়ে তোলা সম্পদ অধিগ্রহণ করা হলে অর্থনীতির অবস্থা উন্নত হবে, সন্দেহ নেই। জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থান যেসব কারণে সংঘটিত হয়েছিল, সেগুলোর অন্যতম ছিল বিগত শাসনামলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ। সুতরাং অভ্যত্থান-পরবর্তী সরকারকে শুধু দেশে দুর্নীতি রোধ করলেই চলবে না, গত শাসনামলের দুর্নীতিবাজদের অবৈধ সম্পদও অধিগ্রহণ করতে হবে। এটা করা গেলে শুধু দেশের অর্থনীতিই ভালো হবে না, দুর্নীতিপ্রবণদের কাছে একটা বার্তা দেওয়া যাবে যে, অবৈধ সম্পদ গড়া হলে সেগুলো চিরস্থায়ী হবে না। এই মনোভাব দুর্নীতি থেকে তাদের নিবৃত্ত করতে সহায়তা করবে। আমরা আশা করব, খুব দ্রুতই দুর্নীতির মাধ্যমে গড়া সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে সরকার দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে তা কার্যকর করা শুরু করবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম