দেশজুড়ে অরক্ষিত রেলক্রসিং, আর কত দুর্ঘটনার পর কর্তৃপক্ষের টনক নড়বে?

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ফাইল ছবি
দেশে অবৈধ ও অরক্ষিত রেলক্রসিংগুলো মৃত্যুফাঁদে পরিণত হওয়ার খবর অনেক পুরোনো। ব্যাপক আলোচনার পরও বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের যেন কোনো মাথাব্যথা নেই। পরিতাপের বিষয় হলো, লেভেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো সমন্বিত পদক্ষেপ নিচ্ছে না। মঙ্গলবার কুমিল্লার বুড়িচংয়ে অরক্ষিত লেভেলক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় অন্তঃসত্ত্বা নারীসহ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সাত যাত্রী নিহত হওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও দুজন। ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশাটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। ওইদিন সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনের বুড়িচং উপজেলার কালিকাপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসন ও রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। জানা যায়, চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনটি কালিকাপুর এলাকায় একটি অবৈধ ক্রসিং পার হওয়ার সময় ব্যাটারিচালিত রিকশাটিকে ধাক্কা দেয়। অটোরিকশায় থাকা ছয় যাত্রী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরও এক যাত্রীর মৃত্যু হয়। জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম ব্যস্ততম রেল সড়কের অবৈধ ক্রসিং পারাপারে ন্যূনতম সতর্কতা অবলম্বন করেননি অটোরিকশাচালক। ক্রসিংটির বৈধতা না থাকায় এ বিষয়ে কোনো প্রকার দায় নিতে চাচ্ছে না রেল কর্তৃপক্ষ। রেল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল সড়কের আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ৬১টি ক্রসিং রয়েছে। এর মধ্যে ৩৮টি ক্রসিং অবৈধ। এসব অবৈধ লেভেলক্রসিংয়ের কয়েকটিতে গেটম্যান দেওয়া হলেও বাকিগুলো অরক্ষিত রয়ে গেছে। গত তিন বছরে এসব ক্রসিংয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। গত ১০ বছরে নিহত হয়েছে কয়েকশ মানুষ।
লেভেলক্রসিংয়ে ঘন ঘন দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছে। প্রশ্ন হলো, অরক্ষিত রেলক্রসিংগুলো সুরক্ষিত করার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না কেন? সারা দেশে অনেক অবৈধ লেভেলক্রসিং রয়েছে। উদ্বেগজনক তথ্য হলো, বহু লেভেলক্রসিংয়ে কোনো গেটম্যান নেই। ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেশি। প্রতিটি রেল দুর্ঘটনার পর এক বা একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত শেষে কমিটি রিপোর্ট জমা দেয়। কিন্তু রিপোর্টের সুপারিশ অনুযায়ী কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয় কিনা, তা জানা যায় না।
রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনার একটি বড় কারণ জনসাধারণের উদাসীনতা। মানুষ সচেতন না হলে শুধু গেটম্যান দিয়ে রেলক্রসিং এলাকার শৃঙ্খলা রক্ষা করা সম্ভব নয়। ট্রেন আসার আগমুহূর্তে রেলক্রসিংয়ে বার ফেলা হলেও সিগন্যাল অমান্য করে পথচারী, মোটরবাইক চালক, এমনকি হালকা যানবাহনও পারাপারের চেষ্টা করে। নিয়ম-কানুন ও আইন সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দিয়ে লেভেলক্রসিংগুলো সুরক্ষিত করার পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। লেভেলক্রসিংয়ের ঝুঁকির বিষয়টিকে হালকাভাবে দেখা অনুচিত। যাত্রীসেবার মানোন্নয়নের পাশাপাশি রেল দুর্ঘটনার কারণগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করে প্রতিকারের ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। রেলে বিদ্যমান দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা দূর করার পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নিতে হবে। ঘন ঘন দুর্ঘটনা ঘটতে থাকলে রেলের প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হবে।