জাতি পেল নির্বাচন কমিশন
চ্যালেঞ্জটা অনেক বড়
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
পাঁচ সদস্যের নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। এর আগে ৫ সেপ্টেম্বর পূর্ববর্তী নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা পদত্যাগ করেন। নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রধান হয়েছেন সাবেক সচিব এএমএম নাসির উদ্দীন। কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন-সাবেক অতিরিক্ত সচিব আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ আবদুর রহমানেল মাসুদ, সাবেক যুগ্ম সচিব বেগম তহমিদা আহমদ এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন তাদের নিয়োগ দিয়েছেন। বুধবার এ সংক্রান্ত দুটি পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। বলা বাহুল্য, দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দাবির মুখে গঠিত হলো নতুন নির্বাচন কমিশন।
জুলাই-আগস্টে যে অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে, এর অন্যতম লক্ষ্য ছিল মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে এনে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার যাতে দেশ পরিচালনা করতে পারে, সেই ব্যবস্থা করা। অভ্যুত্থান সফল হয়েছে এবং মানুষের সেই আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের মনে আছে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪-এর তিনটি নির্বাচন কতটা প্রহসনের ছিল। বস্তুত শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও এই তিন নির্বাচন চরমভাবে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। নির্বাচনে ভোটাররা তাদের পছন্দনীয় প্রার্থীদের ভোট দিতে পারেনি বলে গত রেজিমের প্রতি তারা বিরক্ত শুধু নয়, ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছিল। ক্রমেই এই ক্ষোভ দানা বাঁধে এবং এক পর্যায়ে অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ শাসন করতে থাকা সরকারকে আর সহ্য করতে পারছিল না তারা। এমন এক পটভূমিতে ছাত্রসমাজ এগিয়ে আসে এবং তাদের সঙ্গে যুক্ত হয় জনতা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। এই সম্মিলিত শক্তি এত প্রবল আকার ধারণ করে যে, সরকার তার সব শক্তি প্রয়োগ করেও আর টিকতে পারেনি, সরকারের পতন অনিবার্য হয়ে পড়ে।
স্বাভাবিকভাবেই এখন প্রশ্ন, সাধারণ মানুষ কবে ভোট দিতে পারবে এবং সবাই তাদের নিজের ভোট দিতে পারবে কিনা। প্রথম প্রশ্নের উত্তর রয়েছে সরকারের কাছে। আর দ্বিতীয় প্রশ্নটির মীমাংসা করার দায়িত্ব নবগঠিত নির্বাচন কমিশনের। প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিযুক্ত হয়েছেন যিনি, তিনি অবশ্য বলেছেন, একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করার জন্য যা যা করা দরকার, তারা তা করবেন। তিনি অবশ্য সব মহলের সহযোগিতাও চেয়েছেন। তার দ্বিতীয় কথাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করা কঠিন। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সব মহল, বিশেষত সরকারের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। দ্বিতীয় কথা, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথে যেসব আইগত বাধা রয়েছে, সেগুলোও দূর করতে হবে এবং এ লক্ষ্যে গঠিত সংস্কার কমিটি এ ক্ষেত্রে নতুন আইন ও নিয়ম চালু করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। প্রকৃত প্রস্তাবে ব্যক্তি নয়, প্রতিষ্ঠানই মূল কথা। প্রতিষ্ঠান যদি ভালোভাবে কার্যকর না হয়, তাহলে ব্যক্তি যত যোগ্যই হোন না কেন, জনগণের স্বার্থসিদ্ধ হয় না। সংস্কারের মাধ্যমে নতুন আইনের বলে এই নির্বাচন কমিশন জাতিকে একটি সুন্দর নির্বাচন উপহার দেবে, এটাই প্রত্যাশা। আমরা নবগঠিত নির্বাচন কমিশনের প্রত্যেক সদস্যকে অভিনন্দন জানাই।