অবরোধ-বিক্ষোভে জনদুর্ভোগ
জনগণকে জিম্মি করার কৌশল পরিহার করতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের অবরোধের কারণে মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর এলাকায় তিন দিনের মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এরপর টানা দুদিন রাজধানীতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা।
বুধবার যাত্রাবাড়ীর দয়াগঞ্জ মোড়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তারা। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে রিকশাচালকদের সংঘর্ষ হয়। এতে দুই পুলিশ সদস্য আহত হন। গতকাল সকাল থেকেই মহাখালী, গাবতলী, কল্যাণপুর, আগারগাঁও, মিরপুর, পল্লবী, বসিলাসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা অবরোধ-বিক্ষোভ করলে নগরব্যাপী ভয়াবহ যানজট সৃষ্টি হয়। বহু মানুষ নির্দিষ্ট সময়ে কর্মস্থল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ তাদের গন্তব্যে যেতে পারেননি।
রোগীদের দ্রুততম সময়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। বলা যায়, গতকাল বেশকিছু সময়ের জন্য প্রায় অচল হয়ে পড়েছিল রাজধানী। মহাখালীতে রেলপথ অবরোধের কারণে ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এ পরিস্থিতি অগ্রহণযোগ্য। কারণ ত্রুটিপূর্ণ নকশায় নির্মিত ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো রাজধানীতে দুর্ঘটনাসহ নানা সমস্যার জন্ম দিচ্ছে।
এ বাস্তবতায় এসব অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করে দেওয়াই সমীচীন। এই রিকশাচালকদের অনেকে বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার যে দাবি জানিয়েছেন, তা সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করা যেতে পারে। তবে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলজনিত সমস্যাটি জিইয়ে রাখার সুযোগ নেই। এটিকে নিরুৎসাহিত করাই সমীচীন।
শুধু ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরাই নন; শিক্ষার্থী, কারখানার শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী প্রায়ই তাদের দাবি-দাওয়া আদায়ে সড়ক অবরোধ করে থাকেন। অনেক সময় বিক্ষোভকারীরা ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে এক অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করেন, যা মোটেই কাম্য নয়।
যেমন, গার্মেন্টশিল্প অধ্যুষিত গাজীপুরে প্রায়ই এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। বুধবারও বকেয়া বেতনের দাবিতে জিরানী ও চক্রবর্তী এলাকায় বিক্ষোভে অংশ নেন দুটি পোশাক কারখানার শ্রমিক। এ সময় তারা চন্দ্রা-নবীনগর সড়ক অবরোধ করলে সড়কের উভয় দিকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন ওই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী মানুষ। বিক্ষোভের সময় শ্রমিকরা কয়েকটি বাস ভাঙচুরও করেন।
আমরা দেখে আসছি, যে কোনো আন্দোলন বা বিক্ষোভের সময় সড়কে চলাচলকারী বিভিন্ন যানবাহন ও নিরীহ যাত্রীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়। এ প্রবণতা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। আমরা মনে করি, ন্যায্য দাবি-দাওয়া আদায়ের মাধ্যম হিসাবে আলোচনাকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাও পরিষ্কার জানিয়েছেন সব দাবি-দাওয়ার বিষয়ে লিখিতভাবে জানাতে। এতে অন্তত জনসাধারণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ছন্দপতন ঘটবে না, বিঘ্নিত হবে না নিরাপত্তা। মনে রাখতে হবে, অবরোধ-ভাঙচুর কিংবা অন্যান্য ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড কখনোই দাবি আদায়ের মাধ্যম হতে পারে না।
বস্তুত জনগণকে জিম্মি করে কোনো কর্মসূচিই গ্রহণযোগ্য নয়। দাবি আদায়ে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করার এ কৌশল অগ্রহণযোগ্য। কোনো সংগঠন বা পেশাজীবীর যৌক্তিক দাবি-দাওয়া থাকতেই পারে। তবে তা আদায়ে এমন কৌশল অবলম্বন করা উচিত নয়, যা নিরপরাধ মানুষের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দাবি আদায়ে প্রচলিত এ কৌশলে পরিবর্তন আনা তাই জরুরি হয়ে পড়েছে।