রেলের যাত্রীসেবা
দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা দূর করার পদক্ষেপ নিন
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দেশে রেল খাতের সম্ভাবনা কাজে লাগানো যায়নি। ঘন ঘন ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটার বিষয়টিও উদ্বেগজনক। জানা যায়, রেলের কর্মীদের অবহেলার কারণেই বারবার ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটছে।
পুরোনো ইঞ্জিন, জরাজীর্ণ বগি, সংস্কারবিহীন রেললাইন ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে রেলব্যবস্থার জনপ্রিয়তা কমছে। চলন্ত অবস্থায় ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ার ঘটনাও ঘটে থাকে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শিডিউল বিপর্যয়ের ঘটনা। আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে যাওয়া ৭৭ শতাংশ ইঞ্জিন দিয়ে ট্রেন পরিচালনায় এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। রেলে বর্তমানে কাগজে-কলমে ৩০৩টি ইঞ্জিন থাকলেও সচল রয়েছে ২৩৮টি। মেরামতের কয়েক দিনের মধ্যেই ফের ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ার দৃষ্টান্তও রয়েছে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রেলে হরিলুটের উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও যাত্রীসেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে ইঞ্জিন, কোচসহ রোলিংস্টক সরঞ্জাম ক্রয়ে অনীহা লক্ষ করা গেছে। যেসব উন্নয়ন প্রকল্প ঘিরে দুর্নীতি-লুটপাট করা সহজ, তেমন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
রেলের গতি বাড়িয়ে এ খাতকে আধুনিক ও জনবান্ধব করতে বিশেষজ্ঞরা অতীতে নানা পরামর্শ দিলেও বিগত সরকারের আমলে কর্তৃপক্ষ তা আমলে নেয়নি। রেলে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া হলেও যাত্রীরা কেন সেসব উদ্যোগের সুফল পাননি, তা খতিয়ে দেখা দরকার। ইঞ্জিন বা কোচ রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জনবল ট্রাবল শুটার। রেলে বর্তমানে এ পদে অভিজ্ঞ দক্ষ লোকবল প্রায় শূন্য। গত ২৬ বছর ধরে এ খাতে কোনো নিয়োগ দেওয়া হয়নি। অদক্ষ শ্রমিক দ্বারা ইঞ্জিন মেরামতের নামে বরাদ্দ-অর্থ লুটপাট করা হচ্ছে কিনা, সে প্রশ্নও তুলছেন অনেকে।
রেলের প্রধান সমস্যাগুলো চিহ্নিত হলেও বিগত সরকারের আমলে সেগুলোর সমাধানে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। অভিযোগ রয়েছে, নতুন নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে বিপুল অঙ্কের অর্থ লুটপাট হয়েছে। সারা দেশে বিদ্যমান রেললাইন ও রেলব্রিজগুলো ঝুঁকিপূর্ণ।
এগুলোর মেরামত ও সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে। উন্নয়ন ঘিরে গত দেড় দশকে রেলে যে লুটপাট হয়েছে, এর সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সবাইকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা দরকার। যেহেতু দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে রেলের রুগ্ণ দশা কাটছে না, সেহেতু এ সংস্থার সর্বক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।