Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

অবরোধে জনজীবনে দুর্ভোগ

আলোচনাকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অবরোধে জনজীবনে দুর্ভোগ

সংগৃহীত

রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করাসহ তিন দফা দাবিতে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে সোমবার দিনভর আন্দোলন করেছেন কয়েক শ শিক্ষার্থী। এতে মহাখালী থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সড়কের দুই পাশে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর প্রভাব পড়ে আশপাশের সড়কগুলোয়ও। আন্দোলন চলাকালে নোয়াখালী থেকে ঢাকায় আসা আন্তঃনগর ট্রেন ‘উপকূল এক্সপ্রেস’ মহাখালীতে পৌঁছালে চলন্ত ট্রেনে আন্দোলনকারীরা হামলা-ভাঙচুর চালায়। এতে শিশুসহ অর্ধশতাধিক যাত্রী আহত হন। পরে সারা দেশের সঙ্গে ঢাকার রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া একই দিন সকালে গাজীপুরে দুটি কারখানার শ্রমিক ও এলাকাবাসীর মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষে অন্তত ছয়জন আহত হন। পরে উত্তেজিত শ্রমিকরা বিভিন্ন কারখানায় হামলা-ভাঙচুর করেন। তারা জিরানি বাজারসংলগ্ন একটি পোশাক কারখানায় আগুন ধরিয়ে দেন। এমনকি ফায়ার সার্ভিসকে সে আগুন নেভাতেও বাধা দেন তারা। এতে কারখানার মূল্যবান যন্ত্রপাতি পুড়ে যায়। এ সময় আতঙ্কে আশপাশের অন্তত ২০টি কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর আগে উভয় কারখানার শ্রমিকরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। মহাসড়ক বন্ধ থাকায় আশপাশের সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। স্বভাবতই দুটি ঘটনায়ই চরম ভোগান্তির শিকার হন সড়কে চলাচলকারী মানুষ।

বিশ্ববিদ্যালয় করার কিংবা পাওনা আদায়ের দাবিতে রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকায় বিক্ষোভের সময় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। অতীতেও দেখা গেছে, যে কোনো আন্দোলন বা বিক্ষোভের সময় সড়কে চলাচলকারী বিভিন্ন যানবাহন ও নিরীহ যাত্রীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়, যা মোটেই কাম্য নয়। আমরা মনে করি, ন্যায্য দাবিদাওয়া আদায়ের মাধ্যম হিসাবে আলোচনাকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাও পরিষ্কার জানিয়েছেন সব দাবিদাওয়ার বিষয়ে লিখিতভাবে জানাতে। এতে অন্তত জনসাধারণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ছন্দপতন ঘটবে না, বিঘ্নিত হবে না নিরাপত্তা। ভুলে গেলে চলবে না, অসহিষ্ণুতায় অবরোধ-ভাঙচুর কিংবা জ্বালাও-পোড়াও এবং অন্যান্য ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড কখনোই দাবি আদায়ের মাধ্যম হতে পারে না। দেশের ছাত্রসমাজ, যারা দেশ গড়ার কাজের সহযোগী ও অংশীদারও বটে, তাদের ধৈর্যসহকারে যৌক্তিক উপায়ে নিজেদের দাবি ব্যক্ত করা উচিত। একই সঙ্গে দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির অংশীজন হিসাবে শ্রমিকরা কখনই ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত হতে পারে না। মনে রাখতে হবে, মালিক ও শ্রমিক একই বাইসাইকেলের দুটি চাকার মতো। একটি না থাকলে আরেকটি চলবে না। কাজেই উভয়ের স্বার্থরক্ষায় উভয় পক্ষকেই আন্তরিক হতে হবে।

পোশাকের ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী ব্র্যান্ড হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে। গার্মেন্ট শিল্পের বিকাশ ও সুরক্ষায় মালিক-শ্রমিক সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতে শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণের যৌক্তিকতা নিয়ে দ্বিমত পোষণের অবকাশ নেই। দেশের মোট রপ্তানি আয়ের অন্যূন ৮০ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। কাজেই ছাত্র কিংবা শ্রমিকদের বিক্ষোভের সুযোগ নিয়ে কেউ যেন দেশবিরোধী অপতৎপরতায় লিপ্ত হতে না পারে, সে বিষয়ে সবারই সচেতন থাকা প্রয়োজন। অন্যথায় ষড়যন্ত্রকারীরা এ থেকে ফায়দা লুটতে পারে। সব পক্ষ দাবিদাওয়া আদায়ের বিষয়ে সংযমের পরিচয় দিয়ে আলোচনার টেবিলকেই বেছে নেবে, এটাই প্রত্যাশা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম