রেলের লুটপাটময় অতীত
প্রতিষ্ঠানটিকে দুর্নীতিমুক্ত করার পদক্ষেপ নিন
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান সমস্যাগুলো চিহ্নিত হলেও বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সেগুলোর সমাধানে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। ব্যাপক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও দেশে কেন রেল অবহেলিত থেকে গেল, তা খতিয়ে দেখা দরকার। আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে রেলের বিভিন্ন খাতে কত ধরনের দুর্নীতি হয়েছে, তা বহুল আলোচিত। সমীক্ষা ছাড়াই প্রকল্প গ্রহণ, মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধিসহ নানাভাবে অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে অধিকাংশ প্রকল্পে। অথচ অতি জরুরি ইঞ্জিন-কোচ কেনায় গত ১৫ বছর অনীহা দেখিয়েছেন সংস্থাটির দুর্নীতিবাজরা। অপরদিকে এ সময় এক লাখ ১১ হাজার পাঁচশ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে রেলপথসহ অবকাঠামো নির্মাণে। গত ১৫ বছরে ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধি নয়, কমেছে। ২০০৯ সালে রেল লোকসান গুনেছে ৬২৫ কোটি টাকা; ২০২৩-২৪ অর্থবছরে লোকসান দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ইঞ্জিন-কোচ ক্রয়েও অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এ সংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়ে দুদকে বেশ কয়েকটি মামলার অনুসন্ধান চলছে।
বস্তুত রেলকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। অভিযোগ উঠেছে, নতুন রেললাইন নির্মাণসহ অবকাঠামো উন্নয়নে বিপুল অঙ্কের অর্থ লুটপাট হয়েছে। প্রকল্পের শুরুতে যে অর্থ বরাদ্দ হয়েছে, তা পরবর্তী সময়ে ব্যয় বাড়িয়ে কয়েকগুণের বেশি করা হয়েছে। গত দেড় দশকে ট্রেনের গতি বাড়েনি, বাড়েনি আয়। নিশ্চিত হয়নি যাত্রী নিরাপত্তা। ঝুঁকিপূর্ণ রেলপথ মেরামতসহ কিছু প্রকল্প বাবদ কোটি কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। অথচ কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। সারা দেশে বিদ্যমান রেললাইন ও রেলব্রিজগুলো কতটা ঝুঁকিপূর্ণ, তা বহুল আলোচিত। এ অবস্থায় রেললাইন ও রেলব্রিজগুলোর মেরামত ও সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে। রেলকে যাত্রীদের কাছে জনপ্রিয় করে তুলতে হলে এ খাতের প্রকৃত উন্নয়ন ঘটাতে হবে। কর্তৃপক্ষকে বুঝতে হবে, কেবল বড় বড় প্রকল্প নিয়ে রেলকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা সম্ভব নয়। উন্নয়ন ঘিরে গত দেড় দশকে রেলে যে লুটপাট হয়েছে, এর সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাইকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা দরার।
যাত্রীসেবার মান উন্নত করে বহু দেশ তাদের রেল যোগাযোগব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে। যেহেতু দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে রেলের রুগ্ণ দশা কাটছে না, সেহেতু এ সংস্থার সর্বক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। রেলের পতিত জমি কাজে লাগাতে দূরদর্শী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কঠোর হাতে দমন করা না গেলে রেলের সার্বিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে না।