Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

গ্রামে ঋণপ্রবাহ হ্রাস, কৃষি ও কুটিরশিল্প চাঙা করার উদ্যোগ নিতে হবে

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

গ্রামে ঋণপ্রবাহ হ্রাস, কৃষি ও কুটিরশিল্প চাঙা করার উদ্যোগ নিতে হবে

দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে গ্রামীণ এলাকায় অবস্থিত ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণ কার্যক্রমে। গত অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে কৃষি ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে ঋণ বিতরণ বেড়েছিল ৮ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে বেড়েছে ৬ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে এ খাতে ঋণপ্রবাহ হ্রাসের প্রভাব পড়েছে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে। পাশাপাশি গ্রামীণ এলাকায় আমানত প্রবাহ কমে যাওয়ার বিষয়টিও উদ্বেগজনক।

দেশের সার্বিক অর্থনীতির হালনাগাদ চিত্র নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৈরি প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গ্রামীণ এলাকায় ঋণপ্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আগে যারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিতেন, তাদের বেশির ভাগই ছিলেন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাদের অনেকেই এখন আত্মগোপনে রয়েছেন। এছাড়া বিদ্যমান পরিস্থিতিতে উদ্যোক্তারা নতুন ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে খুব বেশি আগ্রহ প্রকাশ করছেন না। আবার ব্যাংকগুলোও এ পরিস্থিতিতে নতুন ঋণ দিতে চাচ্ছে না। এসব মিলে গ্রামে ঋণপ্রবাহে ভাটা পড়েছে। আশার কথা, অক্টোবরে গ্রামে ঋণ ও আমানত প্রবাহ কিছুটা বেড়েছে।

বোরো চাষের মৌসুম শুরু হয়ে গেছে। শীতকে কেন্দ্র করে গ্রামের সব আবাদি জমিতে চাষ হয়। গত জুলাই-আগস্টে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কয়েক দফা বন্যা হয়েছে। এতে অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে গ্রামীণ এলাকায় এখন ঋণের চাহিদা বেশি হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে কেন বিপরীত চিত্র লক্ষ করা যাচ্ছে, তা খতিয়ে দেখা দরকার। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-আগস্টে কৃষি ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে গ্রামীণ এলাকায় ঋণের প্রবাহ গড়ে বেড়েছিল ৫৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ। পরপর দুই অর্থবছর অর্থাৎ ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্রামীণ এলাকায় ওই দুই খাতে ঋণের প্রবাহ বৃদ্ধির পর চলতি অর্থবছরে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ায় সেখানে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কাজেই কৃষি উৎপাদন ও গ্রামীণ শিল্প চাঙা করার পদক্ষেপ নিতে হবে দ্রুত। গত বছরের জুনে গ্রামীণ এলাকায় আমানতের স্থিতি ছিল ৩ লাখ ৫৯ হাজার কোটি টাকা। চলতি বছরের জুনে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮৩ হাজার কোটি টাকায়। কেন আমানতের স্থিতি কমে গেল, তাও খতিয়ে দেখা দরকার। গ্রামীণ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের অবস্থাও এখন ভালো নয়।

গত কয়েক বছর ধরে লক্ষ করা যাচ্ছে, দেশে শহরের চেয়ে গ্রামেই মূল্যস্ফীতির হার বেশি। এ অবস্থা চলতে থাকলে শহরমুখী মানুষের স্রোত বাড়বে। বর্তমানে দেশের মোট জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ রাজধানীতে বসবাস করছে এবং প্রতিবছর এ নগরীতে নতুন করে কয়েক লাখ মানুষ যুক্ত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, শহরমুখী মানুষের স্রোতের এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৫১ সাল নাগাদ দেশের মোট জনসংখ্যার ৫৫ শতাংশই শহরে বসবাস করবে। অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপে এমনিতেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে সেবার মান তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। এ অবস্থায় নগরমুখী মানুষের স্রোত কমাতে গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থান বৃদ্ধিসহ জীবনযাত্রার মান বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম