Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

কুইক রেন্টাল নিয়ে রায়

হাইকোর্টের নির্দেশনা সাধুবাদযোগ্য

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কুইক রেন্টাল নিয়ে রায়

বিগত সরকারের আমলে ‘দায়মুক্তি’ নামের বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০-এর দুটি ধারা-উপধারা অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। বিধান দুটির প্রশ্নে দেওয়া রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ রায় দেন। একইসঙ্গে জাতীয় ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে এবং জনগণের বৃহত্তর সুবিধা নিশ্চিতে সরকারি মালিকানাধীন পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোর পুরোপুরি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, এ আইনের অধীনে করা কাজ নিয়ে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না এবং চুক্তি করার বিষয়ে মন্ত্রীর একক সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ওই বিধান দুটিতে উল্লেখ ছিল, যা ‘কুইক রেন্টাল’ আইন নামে পরিচিতি পেয়েছিল।

তীব্র ডলার সংকটের সময়ে যেভাবে দফায় দফায় চুক্তি নবায়ন করা হয়েছে, তা কোনোভাবেই কাম্য ছিল না। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কিনতে সরকারের খরচ বেড়েছে, যার প্রভাব পড়েছে গ্রাহক পর্যায়ে। বস্তুত এসব রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র যে জনসাধারণের গলার কাঁটা, এ কথা বারবার বলে এসেছি আমরা। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়াই ছিল সমীচীন। আপৎকালীন সময় তথা ২-৩ বছরের জন্য রেন্টাল কিংবা কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দেওয়া যুক্তিসংগত হলেও দফায় দফায় এর মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অর্থনীতির জন্য ছিল আত্মঘাতী। সক্ষমতার অর্ধেক বিদ্যুৎ না নিয়েও বিপুল অঙ্কের টাকার ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়ার যে নজির বিগত সরকার স্থাপন করেছে, তা অবশ্যই নিন্দনীয়। বস্তুত, বিদ্যুৎ খাতে দুরবস্থার জন্য মূলত এই ক্যাপাসিটি চার্জই দায়ী। উৎপাদন না করলেও টাকা পরিশোধ করার বিষয়টি সাধারণ যুক্তিতে মেনে নেওয়া কঠিন।

জানা যায়, বিদ্যুৎ সংকটকে পুঁজি করে বিগত সরকারের একটি সিন্ডিকেট গত ১৫ বছরে এ খাতে ব্যয় করেছে ৩ লাখ কোটি টাকা। এ সময়ে শুধু রেন্টাল-কুইক রেন্টালের আড়ালে অস্বাভাবিক দরে বিদ্যুৎ কেনার নামে লুটপাট আর পাচার করা হয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকা। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো অলস বসিয়ে রেখে শুধু ক্যাপাসিটি চার্জের নামে দিতে হয়েছে ১ লাখ ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ, যার পুরোটাই হয়েছে লুটপাট। কোনো কোনো রেন্টাল-কুইক রেন্টাল কেন্দ্রের মালিক নানা কূটকৌশলে বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেই বছরে ২৫০ কোটি থেকে ৫০০ কোটি টাকা পর্যন্ত আয় করেছে। আশার কথা, অন্তর্বর্তী সরকার বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে বসিয়ে বসিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়ার পদক্ষেপ থেকে বের হয়ে আসার উদ্যোগ নিয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের আর কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি নবায়ন না করার। এরই মধ্যে স্থগিত করা হয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের দায়মুক্তির বিধান। বিগত সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের চুক্তিগুলো পর্যালোচনায় একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটিও গঠন করা হয়েছে। দেশের স্বার্থে নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের এসব পদক্ষেপ সাধুবাদযোগ্য। সিন্ডিকেটে যারা জড়িত, তাদের ব্যাপারেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে নিশ্চয়ই। সর্বোপরি, বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে সরকার দেশ ও জনগণের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম