বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ হ্রাস
বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দেশে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহে ছন্দপতনের বিষয়টি উদ্বেগজনক। গত চার বছরের মধ্যে এ খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর-তিন মাসে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে দশমিক ৬৭ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে একই সময়ে এ খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল দশমিক ৬৪ শতাংশ। এরপর ২০২০-২১ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রতি জুলাই-সেপ্টেম্বরে সোয়া ১ থেকে ২ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। গত চার বছরের তুলনায় বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির হার কমার জন্য রাজনৈতিক অস্থিরতা, কয়েক দফা বন্যা এবং উদ্যোক্তাদের আস্থাহীনতাকে দায়ী করা হচ্ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের ফলে পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করেছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি দ্রুতই স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দুর্নীতি, অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন কারণে অর্থনীতিতে স্থবিরতা নেমে এসেছিল। সংশ্লিষ্টরা আশা করেছিলেন, বর্তমান সরকারের আমলে দ্রুত ঘুরে দাঁড়াবে অর্থনীতি। কিন্তু এখন পর্যন্ত অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। আশার কথা, ডলার সংকট কেটে যাচ্ছে। দ্রুত পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে, এটাই প্রত্যাশা। গত ১৫ বছর ধরে দেশের বেশিরভাগ ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের লোকজন এবং তাদের ঘনিষ্ঠদের নিয়ন্ত্রণে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাদের লোকজন এখন বেশিরভাগই পলাতক। ফলে তাদের ব্যবসা এখন প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে।
মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে গত তিন অর্থবছরে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মুদ্রানীতিকে আরও কঠোর করা হয়েছে। নতুন সরকার এসে মুদ্রানীতি আরও কঠোর করেছে। জুলাই-আগস্টে বেসরকারি খাতে ঋণের গতিপ্রকৃতি আগের মাসের নেতিবাচক অবস্থা থেকে কিছুটা বেড়ে প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় দশমিক ০৯ শতাংশে। মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের মধ্যে বেসরকারি খাতেই সিংহভাগ ঋণ রয়েছে। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ঋণের স্থিতি ছিল প্রায় ২১ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে বেসরকারি খাতে ঋণের স্থিতি সাড়ে ১৬ লাখ কোটি টাকা। দেশে মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ৯৫ শতাংশই হয়ে থাকে বেসরকারি খাতে। এ কারণে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে পুরো অর্থনীতিতেই।
বস্তুত দেশের অর্থনীতি, কর্মসংস্থান, সেবা ও শিল্পোৎপাদন মোটামুটি বেসরকারি খাতনির্ভর। এ খাতে বড় ব্যবসায়ীরা গত ১৫ বছর ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত করেছেন। নতুন পরিস্থিতিতে তারা আগের মতো ঋণ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাবেন না। এসব কারণে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধিতে এক ধরনের অনিশ্চয়তা থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। এ অবস্থায় জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিংবা কর্মসংস্থান সৃষ্টির কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে বেসরকারি খাতকে চাঙা করার পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের মূল সংকটগুলো বহুল আলোচিত। সেসব সংকট দূর করার পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ না থাকলে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বিনিয়োগ হবে না, নতুন কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে না। কাজেই দেশের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।