গত সরকারের গোপন বন্দিশালা, কমিশনের চুলচেরা তদন্তে সত্য বেরিয়ে আসুক
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
বিগত সরকার পতনের পর গত ২৭ আগস্ট গুমসংক্রান্ত কমিশন গঠন করে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। গঠনের পর এ কমিশনের কাছে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে গুমের ঘটনার অভিযোগ জানানোর আহ্বান জানানো হয়। বুধবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, গুমসংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারিতে এ পর্যন্ত ১৬০০ অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে ১৪০ জনের সাক্ষাৎকারও নেওয়া হয়েছে। এছাড়া অভিযোগ খতিয়ে দেখা হয়েছে ৪০০টি। এসবের মধ্যে ১৭২টি অভিযোগ মিলেছে র্যাবের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়েছে, রাজনৈতিক, জঙ্গি সন্দেহসহ চার কারণে অধিকাংশ গুমের ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ পর্যালোচনা করতে গিয়ে আরও বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে বলেও জানান কমিশনের সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী। যেমন, ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় আটটি গোপন বন্দিশালার সন্ধান পাওয়া গেছে। এসব বন্দিশালা আয়নাঘরের চেয়েও ভয়ানক। তবে কাদের তত্ত্বাবধানে এগুলো ছিল, তদন্তের স্বার্থে এ ব্যাপারে কোনো তথ্য দেয়নি কমিশন। এছাড়া যারা নির্ধারিত সময়ে অভিযোগ জানাতে পারেননি, কমিশন জানিয়েছে, তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে পরে তাদের অভিযোগ গ্রহণ করা হবে।
উদ্বেগের বিষয় হলো, আলামত নষ্টের উদ্দেশে অনেক গোপন বন্দিশালা ভেঙে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এ ব্যাপারে অবশ্য কমিশনের সভাপতি জানিয়েছেন, গুম হওয়া ব্যক্তিদের যেসব গোপন বন্দিশালায় রেখে নির্যাতন করা হতো, সেগুলো ভেঙে ফেলা অর্থাৎ আলামত নষ্ট করার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের গুমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সহযোগী হিসাবে বিবেচিত করা হবে। একইসঙ্গে আলামত ধ্বংস না করার জন্যও সবাইকে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
শুধু সেনা এলাকাতেই নয়, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানেই এমন গুমখানা গড়ে তুলেছিল বিগত সরকার। তদন্তের স্বার্থে আলামত হিসাবে এসব গুমখানাকে কোনোভাবেই ধ্বংস করার সুযোগ দেওয়া উচিত নয় বলে মনে করি আমরা। এজন্য শুধু সতর্কবাণী নয়, প্রয়োজন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। পাশাপাশি এ তদন্তকাজে কেউ যেন ব্যক্তিগত আক্রোশের শিকার না হন, সেটিও কমিশনকে স্মরণে রাখতে হবে। অভিযোগ খতিয়ে দেখে তদন্তের ভিত্তিতে প্রকৃত দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং অনিয়মের শিকার হওয়া ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সুবিচার নিশ্চিতে কমিশন চুলচেরা বিশ্লেষণের ভিত্তিতে তদন্তকাজ পরিচালনা করবে, এটাই প্রত্যাশা।