শিশুদের রক্তে অতিরিক্ত সিসা
স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে পদক্ষেপ কাম্য
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বাংলাদেশে ৩৫ দশমিক ৫ মিলিয়নেরও বেশি অর্থাৎ ৩ কোটি ৫৫ লাখ শিশুর রক্তে নিরাপদ মাত্রার বেশি সিসার উপস্থিতি রয়েছে। ফলে শিশুদের স্বাস্থ্য সংকট দেখা দিচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর মিলনায়তনে ‘ইয়ুথ ভয়েস ফর এ লেড-ফ্রি ফিউচার : এম্পাওয়ারিং চেঞ্জ অ্যান্ড রেইজিং এওয়ারনেস’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে এমন তথ্যই জানানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক সিসা বিষক্রিয়া প্রতিরোধ সপ্তাহ (আইএলপিপিডব্লিউ) ২০২৪-এর সমাপ্তি উপলক্ষ্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো), ইউনিসেফ বাংলাদেশ, ইউএসএইড, কেয়ার বাংলাদেশ যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বিশেষজ্ঞরা জানান, সিসা দূষণে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। স্বাস্থ্য, সমাজ, পরিবেশ এবং বিশেষভাবে শিশুদের ওপর এর গভীর প্রভাব ফেলছে। মাটিতে, বাতাসে, শিশুদের খেলনা, খাবার, মসলা, পানি ও রঙে থাকা সিসার কারণে মানবস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার যদিও হলুদে সিসা মেশানো বন্ধ করেছে, তারপরও সিসা দূষণ শিশুদের ক্ষতি করছে, যা তাদের মস্তিষ্কের বিকাশ, শারীরিক স্বাস্থ্য এবং মানসিক সুস্থতায় প্রভাব ফেলছে।
দেশের সাড়ে ৩ কোটির বেশি শিশুর রক্তে উচ্চমাত্রার ক্ষতিকর সিসা উপস্থিতির বিষয়টি উদ্বেগজনক, তা বলাই বাহুল্য। কারণ এর প্রভাবে শিশুদের বুদ্ধিমত্তার বিকাশই শুধু ব্যাহত হচ্ছে, তা নয়; দৈহিক গঠনও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এক গবেষণায় জানা গেছে, শৈশবে যাদের শরীরে সিসার মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতির প্রমাণ মেলে, বড় হয়ে তাদের দেহে নানারকম জটিলতা সৃষ্টির আশঙ্কাও বেশি থাকে। সিসা একটি শক্তিশালী নিউরোটক্সিন, যা শিশুদের মস্তিষ্কের অপূরণীয় ক্ষতি করে। এটি পাঁচ বছরের কম বয়সিদের ক্ষেত্রে ধ্বংসাত্মক পরিণতি বয়ে আনে; পুরোপুরিভাবে মস্তিষ্ক বিকশিত হওয়ার আগেই ক্ষতি করে। মাত্রাতিরিক্ত সিসার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের সারা জীবনের জন্য স্নায়বিক, মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়। এমনকি মারাত্মক সিসা দূষণ অনেক সময় মৃত্যুর কারণও হয়ে দাঁড়ায়। দেখা গেছে, সিসা মানুষের হাড়ে প্রবেশ করলে ২৫ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত থেকে যেতে পারে।
উদ্বেগজনক হলো, দেশে প্রায় প্রতিটি খাদ্যসামগ্রী নিয়েই চলছে ভেজালের মহোৎসব। তাই ভেজাল রোধে কর্তৃপক্ষকে কঠোর হতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না, সিসা একটি নীরব ঘাতক, যা মস্তিষ্কের উন্নয়ন ও সামগ্রিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। শিশুদের ভবিষ্যৎ সুন্দর করতে এ বিষাক্ত উপাদানটি পরিবেশ থেকে দূর করার জন্য তাই কঠোর নিয়মের প্রয়োজন।