ইভিএমের কারিগরি স্বত্ব
ইসির সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত কাম্য
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার বহুল আলোচিত-সমালোচিত একটি পদ্ধতি। এর প্রযুক্তি ও ব্যবহারবিধি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যেও রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তবে যে মেশিনকে নিয়ে এত আলোচনা, সেই ইভিএম-এর কারিগরি স্বত্বই এখনো বুঝে পায়নি নির্বাচন কমিশন। মঙ্গলবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-দক্ষ জনবল না থাকা, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়া এবং মেশিন সংগ্রহ চুক্তিতে অস্পষ্টতার কারণে দেড় লাখ ইভিএম মেশিনের কারিগরি ডকুমেন্ট ও প্রকল্পের আওতায় কেনা মালামাল বুঝে পেতে জটিলতার মধ্যে পড়েছে কমিশন সচিবালয়। ইসি সচিবের মতে, প্রকল্পের আওতায় কেনা দেড় লাখ ইভিএম, ইভিএম-এ ব্যবহার করা টেকনোলজি, গাড়ি ও অন্য সবকিছুই নির্বাচন কমিশনের। এখন এসব জিনিস বুঝে নেওয়ার সময় সমস্যা হচ্ছে টেকনোলজি ট্রান্সফার নিয়ে। যারা ইভিএম তৈরি করেছে, এখন তাদের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
জানা যায়, ইভিএম-এর সফটওয়্যারের আনএনক্রিপটেড সোর্সকোড ও আর্কিটেকচার, ডেটাবেজ আর্কিটেকচার, ডকুমেন্টেশনসহ কারিগরি সবকিছুই বুঝিয়ে দিতে সম্প্রতি প্রকল্প ও সরবরাহকারী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছে ইসি। পাশাপাশি ওইসব মালামাল বুঝে নেওয়ার জন্য ব্যয় না বাড়িয়ে শুধু মেয়াদ বাড়াতে পরিকল্পনা কমিশনকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। আরও জানা যায়, প্রকল্পের আওতায় কেনা দেড় লাখ ইভিএম-এর মধ্যে এখনো ১ হাজার ৪২৭টির খোঁজ নেই।
উল্লেখ্য, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালে ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘নির্বাচনব্যবস্থায় তথ্যপ্রযুক্তি প্রয়োগের লক্ষ্যে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার’ শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদন করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। ২০২৩ সালের জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা এক বছর বাড়ানো হয়। বিএনপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের বিরোধিতার মধ্যেই ওই প্রকল্পের আওতায় সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে (ডিপিএম) দেড় লাখ ইভিএম কেনা হয়। যদিও ওই নির্বাচনে মাত্র ছয়টি আসনে এ মেশিনে ভোটগ্রহণ হয়। পরে বিভিন্ন ধরনের নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছে।
যেহেতু ইসিতে ইভিএম মেশিনের টেকনোলজি জানা দক্ষ জনবল নেই, তাই স্বাভাবিকভাবেই সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সহযোগিতা না করলে এসব ইভিএম আর কোনো নির্বাচনে ব্যবহার করা সম্ভব হবে না। কাজেই আগামী নির্বাচনগুলো ইভিএম পদ্ধতিতে সম্পন্ন করতে চাইলে ইসিকে দক্ষ জনবল তৈরিতে মনোযোগ তো দিতে হবেই, পাশাপাশি ইভিএমের সোর্সকোডসহ আপডেট সফটওয়্যার বুঝে পেতেও উদ্যোগী হতে হবে, যাতে তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে।
প্রশ্ন হলো, যে মেশিনগুলো ইসির কাছে রয়েছে, তার সবই ব্যবহারযোগ্য কি না। অযত্ন-অবহেলায় যদি অধিকাংশ মেশিন ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে, তাহলে আগামী নির্বাচনগুলোয় ব্যয়বহুল এ পদ্ধতি নিয়ে অগ্রসর হওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে কি না, সেটা ভেবে দেখার অবকাশ রয়েছে। দেশের ভোটারদের মাঝে এ পদ্ধতি কতটা জনপ্রিয়, সেটাও মূল্যায়নের প্রয়োজন রয়েছে। নিকট-অতীতেও ইভিএম মেশিন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে নানা অভিযোগ উঠতে আমরা দেখেছি। এর ব্যবহারবিধি নিয়ে যেমন আপত্তি উঠতে দেখা গেছে, তেমনই এর ফলাফল গণনা পদ্ধতি নিয়েও রয়েছে সন্দেহ-বিতর্ক। আধুনিক প্রযুক্তি হলেও ব্যালটে সিল মারার যে উৎসাহ ও আগ্রহ এদেশের ভোটারদের মধ্যে রয়েছে, তা পূরণে কিন্তু ইভিএম অক্ষম। ইভিএম বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সঠিক ও সময়োচিত পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।