শেয়ারবাজারের দুরবস্থা কাটিয়ে উঠতে প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সংস্কারের নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও শেয়ারবাজারে রক্তক্ষরণ থামছে না। সোমবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-আগের দিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূল্যসূচক কমেছে ১৫০ পয়েন্ট। আর ৫ আগস্টের পর সূচক কমেছে ১ হাজার ৫০ পয়েন্ট এবং বাজারমূলধন কমেছে ৬৬ হাজার কোটি টাকা। দেখা যাচ্ছে, দীর্ঘদিন পর সূচক ৫ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে গেছে। টানা দরপতনে পুরো বাজার বিপর্যস্ত, কমছে তারল্য প্রবাহ। আসছে না নতুন বিনিয়োগও।
এমন অবস্থায় সব হারিয়ে বিনিয়োগকারীরা এখন নিঃস্বপ্রায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার ক্রেতাশূন্য হওয়ায় কমছে দাম। মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজগুলো এ অবস্থায় মার্জিন ঋণ সমন্বয়ের জন্য ফোর্সড সেল (বাধ্যতামূলক শেয়ার বিক্রি) করছে। এতে পতন আরও ত্বরান্বিত হচ্ছে।
শেয়ারবাজারের এমন পরিস্থিতি যে একদিনে হয়নি, তা বলাই বাহুল্য। তবে শেয়ারবাজার ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নতুন নেতৃত্বের প্রতিও বিনিয়োগকারীদের আস্থা নেই বলে বিশ্লেষকরা বলছেন। ফলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিও বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করতে পারছে না। তাদের মতে, সংকট উত্তরণে এখন বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানোই বড় চ্যালেঞ্জ। অবশ্য নতুন ডিএসইর চেয়ারম্যান গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিনিয়োগকারীদের প্রতি পরিস্থিতি উত্তরণে আস্থা না হারিয়ে ধৈর্য ধরার অনুরোধ করেছেন। সেক্ষেত্রে নতুন নেতৃত্ব কতটা সফলভাবে সংস্কারসাধন করতে পারছে, সেটাও দেখার বিষয়।
সুশাসন নিশ্চিতে বিগত সরকারের আমলে গজিয়ে ওঠা সিন্ডিকেট দমন করা তো আছেই, যেসব প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে মার্কেটে রয়েছে, তাদের মধ্যে কারা কারসাজির আশ্রয় নিয়েছে ও নিচ্ছে, তা-ও খতিয়ে দেখা জরুরি। আবার পুঁজিবাজারে নতুন যেসব প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত হচ্ছে ও হবে, তারা আর্থিকভাবে কতটা শক্তিশালী, সেটিও যাচাইয়ের প্রয়োজন রয়েছে। এক্ষেত্রে শুধু পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা স্টক এক্সচেঞ্জকে কাজ করলে হবে না, সরকারেরও হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। এছাড়া পুজিবাজারে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের জন্য বিদ্যমান আয়কর আইন বিনিয়োগবান্ধব নয়। বিদ্যমান আয়কর আইনে বলা আছে, ব্যক্তিশ্রেণির করদাতারা তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করে ৫০ লাখ টাকার বেশি মূলধনি মুনাফা করলে কর দিতে হবে। এতে যারা ৩০ শতাংশ হারে কর দেন, তাদের সারচার্জসহ করের হার ক্ষেত্রবিশেষে সাড়ে ৪০ শতাংশে পৌঁছে যায়, যা অনেক বেশি। ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজারবিমুখ হওয়ার এটিও একটি কারণ। তাই এ ব্যাপারেও সময়োচিত পদক্ষেপ জরুরি।
যে কোনো দেশের অর্থনীতিতে শেয়ারবাজার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতিতে এর আবশ্যকতা কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায় না। বিশেষ করে শিল্প খাতে দীর্ঘমেয়াদি পুঁজির জোগান নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে শেয়ারবাজারের কোনো বিকল্প নেই। কাজেই দীর্ঘমেয়াদে বাজার টেকসই হলে অপতৎপরতাকারীদের বিরুদ্ধে আইন অনুসারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে কমিশনকে তৎপর থাকতে হবে। শেয়ারবাজারে কোনো সিন্ডিকেট যাতে গজিয়ে উঠতে না পারে, সে ব্যাপারেও কমিশনকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, বাজারের এ পরিস্থিতিতে এখন সর্বোচ্চ সতর্কতা ও উদ্যোগের সময় এসেছে। এর ওপরই নির্ভর করছে আগামী দিনের পুঁজিবাজারের অবস্থা। শেয়ারবাজারে সুশাসন নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষ যথাযথ উদ্যোগ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।