কৃষিজমিতে ইটভাটা: পরিবেশ অধিদপ্তর করছেটা কী?
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দেশে এসব কী হচ্ছে? স্বার্থান্বেষী মহলের ন্যূনতম বিচারবুদ্ধিও কি থাকবে না? এদেশ এমন এক পর্যায়ে চলে গেছে যে, মানুষের ভালো-মন্দ, পরিবেশের ভালো-মন্দ একশ্রেণির অর্থলোভী মানুষের কাছে একেবারেই তুচ্ছ বিষয়। আর্থিক মুনাফাই বড় কথা, সেটা আইন-কানুন, ন্যায়পরায়ণতা ভঙ্গ করে হলেও। গতকাল যুগান্তরে প্রকাশ পেয়েছে, কুমিল্লায় ইট তৈরি করতে গিয়ে একশ্রেণির ভাটা মালিক পরিবেশের ক্ষতি করছে না শুধু, তারা দেশের খাদ্য নিরাপত্তাও হুমকির মুখে ফেলেছে। কুমিল্লায় ইট তৈরির মাটির উৎস নিয়ে অঙ্গীকার করেছিলেন ভাটা মালিকরা। ইটভাটা তৈরি করার আগে তারা পরিবেশ অধিদপ্তরে অঙ্গীকারনামা জমা দিয়েছিলেন এই মর্মে যে, তারা পতিত জলাভূমি থেকে মাটি সংগ্রহ করবেন। কিন্তু এই অঙ্গীকার ভঙ্গ করে তারা গোমতীর চর এবং কৃষিজমির ‘টপ সয়েল’ অর্থাৎ উপরের মাটি কেটেই ইট তৈরি করছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, এতে প্রতিবছর কৃষিজমির পরিমাণ কমছে এবং এর ফলে জেলার খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে।
সাম্প্রতিক অবস্থা হলো, জেলায় সাড়ে তিন শতাধিক ইটভাটা রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এসব ভাটায় কৃষিজমির মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে। ২০ বছর আগেও খাদ্য উৎপাদনে কুমিল্লা এক বিশেষ ভূমিকা পালন করত। ধান, সবজি, সরিষা, ভুট্টা ও সবজির চারা উৎপাদনে এই জেলা শীর্ষস্থানে অবস্থান করছিল। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ফুল-ফল ও মসলা ধরনের ফলনেও এ জেলা ছিল অগ্রস্থানে। এ ঐতিহ্য এখন আর ধরে রাখা যাচ্ছে না। এদিকে ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়া জেলাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ায় ঘটছে বায়ুদূষণ। এ দূষণ জনস্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক।
প্রকৃতপক্ষে এ চিত্র শুধু কুমিল্লার নয়, সারা দেশেই ইটভাটার কার্যক্রম নিয়মমাফিক হচ্ছে না। আমাদের প্রশ্ন হলো, পরিবেশ অধিদপ্তরের কাজটা তাহলে কী? নাকি অর্থের বিনিময়ে তাদের ম্যানেজ করা হয়? অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিবেশ উপদেষ্টা দীর্ঘদিন থেকে পরিবেশ উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। আমরা আশা করব, বর্তমান সংস্কার কর্মসূচির সমান্তরালে তিনি সারা দেশের পরিবেশ উন্নয়নেও ভূমিকা রাখবেন। প্রাথমিকভাবে সারা দেশের সব ইটভাটাকে পরিদর্শনের আওতায় আনা হোক। এরপর চিহ্নিত করা হোক কোন্ কোন্ ইটভাটায় পরিবেশ অধিদপ্তরের নিয়ম মানা হচ্ছে না। পরিদর্শন শেষে অভিযুক্ত মালিকদের বিরুদ্ধে নেওয়া হোক যথাযথ ব্যবস্থা। এ ধরনের পরিবেশ ধ্বংসকারী কর্মকাণ্ডকে কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া চলে না।